কলমি শাক চাষ ও এর পুষ্টিগুণ:
নিত্যদিনের সবজির ঝুড়িতে যেসব শাক তেমন চোখে পড়ে না, কলমি শাক তার মধ্যে একটি। ডাঁটা-পাতা মিলিয়ে সরল-সিধে এই শাকটিই আদতে এক গোপন পুষ্টির ভাণ্ডার। হয়তো বাজারে দামে সস্তা, কিন্তু শরীরের জন্য এর উপকারিতা অমূল্য।
অন্য শাকের রঙিন ঝলকানিতে যাকে আপনি হয়তো পাশ কাটিয়ে যান, সেই কলমি শাকই হতে পারে আপনার প্রতিদিনের সুস্থতার এক সহজ সূত্র। এবার থেকে তাই প্লেটে একটু জায়গা দিন এই সবুজ ‘গেমচেঞ্জার’কে!
বিশেষজ্ঞদের মতে,
কলমি শাকে থাকে ভিটামিন ‘এ’ আর ‘সি’ -এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, আয়রন এবং আরও কিছু দরকারি খনিজ উপাদান। নিয়মিত খেলে এটি দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এমনকি রক্তস্বল্পতার মতো সমস্যাও কমাতে পারে।
সহজ কলমি শাক চাষ পদ্ধতি জেনে নিন
গ্রীষ্মকালীন শাকের দুনিয়ায় কলমি এক চুপচাপ কর্মী—পুষ্টিতে ভরপুর, চাষে সহজ। প্রায় সব ধরণের মাটিতেই এটি সারা বছর চাষ করা গেলেও, দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটিতে কলমি শাক বেড়ে ওঠে সবচেয়ে ভালো ভাবে।
কলমি বীজ বুনোর উপযুক্ত সময়?
চৈত্র থেকে শ্রাবণ—অর্থাৎ মধ্য মার্চ থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত। তবে গিমা কলমি এমন এক জাত, যাকে সারা বছরই চাষ করা যায়।
স্বল্প যত্নে, সুলভ উপায়ে—এই শাক চাষে আপনি যেমন পাবেন ঘরোয়া সবুজের নিশ্চয়তা, তেমনি খাবারেও যোগ হবে ভরসাযোগ্য পুষ্টি।
জমি তৈরি :
ফসলের ভালো ফলনের জন্য শুরুতেই দরকার ভালোভাবে জমি প্রস্তুত করা। ৫-৬ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। এরপর বীজ বপনের পালা।
কলমি বীজ বপনের সহজ পদ্ধতি:
বীজ বোনার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে:
- লাইন করে বপন – এতে যত্ন নেওয়া সহজ হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সেমি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ১৫ সেমি রাখতে হয়।
প্রতিটি গর্তে ৫-৭টি বীজ ফেলা ভালো। এতো দ্রুত গোছালো হয়।
- ছিটিয়ে বপন – সাধারণত কম পরিশ্রমে বেশি এলাকা বপনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বপনের ৩-৪ দিনের মধ্যেই চারা গজায়।
- বীজ ছাড়াও গাছের কান্ড কেটে অথবা চারা রোপণ করেও চাষ করা যায়।
সার প্রয়োগ:
এখানে ১ শতাংশ জমির হিসাব দেওয়া হলো:
- গোবর: ৪০ কেজি
- ইউরিয়া: ৬০০ গ্রাম
- টিএসপি: ২০০ গ্রাম
- এমওপি: ১০০ গ্রাম
ইউরিয়া ছাড়া সব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া দিতে হয় তিন কিস্তিতে, প্রতিবার শাক কাটার পর।
পরিচর্যা ও সেচ:
- আগাছা দেখা দিলেই তুলে ফেলতে হবে।
- জমির উপরিভাগ শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানি দিয়ে ভেঙে দিতে হবে।
- বৃষ্টির অভাবে সেচ দিতে হয়।
রোগ ও পোকা ব্যবস্থাপনা:
- কলমি শাকে রোগপোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম।
- তবে পাতার বিটল, কচ্ছপ পোকা, ঘোড়া পোকা ও বিছা পোকা পাতা খেয়ে ক্ষতি করতে পারে।
- ড্যাম্পিং অফ রোগে তরুণ গাছের গোড়া পচে যায়, বিশেষ করে জমি অতিরিক্ত ভেজা থাকলে।
প্রয়োজনে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ:
- বীজ বপনের মাত্র ৩০ দিনের মধ্যেই কলমি শাক সংগ্রহের উপযোগী হয়ে ওঠে।
- ডাল যখন ১২-১৫ ইঞ্চি লম্বা হয়, তখনই কাটার উপযুক্ত সময়।
একবার কাটার পর গাছ গোড়া থেকে আবার নতুন ডাল ছড়ায়, ফলে এক জমি থেকে একাধিকবার ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব।
“সঠিক যত্নে কলমি শাক চাষ হয় সহজ আর লাভজনক।”