ঢেঁড়শের খেত থেকে পারিবারিক আয় ও পুষ্টির জোগান
																																		ঢেঁড়শ চাষ: স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক সবুজ বন্ধন
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সবজিগুলোর মধ্যে ঢেঁড়শ অন্যতম। গ্রামের হাট থেকে শহরের বাজার—সবখানেই ঢেঁড়শের চাহিদা বেশ ভালো। এর পেছনে রয়েছে এর পুষ্টিমান ও সহজ চাষ যোগ্যতা। ঢেঁড়শে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘বি’, আয়োডিন, ভিটামিন ‘এ’ এবং নানা ধরনের খনিজ পদার্থ। নিয়মিত ঢেঁড়শ খেলে গলাফোলা রোগ প্রতিরোধ হয় এবং হজম শক্তি বাড়ে।

মাটি ও জলবায়ু:
ঢেঁড়শ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাটি হলো দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ। তবে যদি পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকে, তাহলে এটেল মাটিতেও এই সবজির চাষ করা সম্ভব। হালকা উষ্ণ জলবায়ু ঢেঁড়শের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।
উপযোগী জাত
দেশে এখন অনেক উন্নত জাতের ঢেঁড়শ পাওয়া যায়। যেমন:
- শাউনি
 - অনামিকা
 - বল্টু
 - সুপ্রিম ১৫৩
 - পারবনি কানি
 - বারী ঢেঁড়শ
 - পুশা সাওয়ানী
 - পেন্টা গ্রীন
 - কাবুলী ডোয়ার্ফ
 - জাপানি প্যাসিফিক গ্রীন
 
এই জাতগুলোর মধ্যে শেষের দুটি সারাবছর চাষের জন্য উপযোগী।

চাষের সময়:
ঢেঁড়শ গ্রীষ্মপ্রধান ফসল হলেও সারা বছর চাষ সম্ভব। সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বপনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়। প্রতি শতকে ২০ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টরে ৪-৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
বীজ বপন:
বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেমি. ও গর্ত থেকে গর্ত ৪৫ সেমি. রাখতে হয়। প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন করা যায়। চারা গজানোর পর সুস্থ একটি চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়।

সার প্রয়োগ :
প্রতি শতাংশ জমিতে সার প্রয়োগের হার,
| উপাদান | পরিমাণ | 
|---|---|
| গোবর | ৭৫ কেজি | 
| সরিষার খৈল | ১.৫ কেজি | 
| ইউরিয়া | ২৩০ গ্ৰাম | 
| টিএসপি | ৩৫০ গ্ৰাম | 
| এমওপি | ২৩০ গ্ৰাম | 
সব সার ইউরিয়া বাদে জমি তৈরি করার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া দুই কিস্তিতে দিতে হয়—চারা গজানোর ২০-২৫ দিন ও ৪০-৫০ দিন পর।

পরিচর্যা ও সেচ
- জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে
 - মাটি মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হয়।
 - প্রয়োজন অনুযায়ী ১০-১২ দিন পরপর সেচ দিতে হয়।
 - সার ছিটিয়ে দেওয়ার পর সেচ দেওয়া অবশ্যই জরুরি।
 - বৃষ্টি আগে পরে সার প্রয়োগে পানি সেচ দেওয়া প্রয়োজন নেই।
 
রোগ ও পোকামাকড় দমন:
ঢেঁড়শ চাষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফল ছিদ্রকারী পোকা। এছাড়া জাব পোকা, সাদা মাছি, লাল গান্ধি ইত্যাদিও ক্ষতিকর।

রোগের মধ্যে হলদে শিরা স্বচ্ছতা, মোজেইক এবং পাতার দাগ রোগ বেশি দেখা যায়।
ফসল সংগ্রহ
বীজ বোনার ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে এবং ফুল ফোটার ৩-৫ দিনের মধ্যে ঢেঁড়শ সংগ্রহযোগ্য হয়ে ওঠে। ফল যখন ৮-১০ সেমি. লম্বা হয়, তখনই তা সংগ্রহ করতে হয়। দেরি করলে ফল শক্ত হয়ে যায় এবং বাজারমূল্য কমে যায়।

উপসংহার:
ঢেঁড়শ চাষ শুধু যে স্বাস্থ্যকর ফসল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এটি একজন কৃষকের জন্য লাভজনক একটি সবজি চাষও বটে।কারণ ঢেঁড়স একদিন পর পর সংগ্ৰহ করা যায়। সঠিক পরিচর্যা ও পরিকল্পনা থাকলে ঢেঁড়শ চাষ হতে পারে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি একটি ভালো আয় বর্ধক উদ্যোগ।
        


                        
                            
