মরিচ চাষের আধুনিক পদ্ধতি: লাভজনক কৃষির এক সম্ভাবনা

বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে মরিচের ব্যবহার থাকলেও এই ফসলটি চাষের সঠিক পদ্ধতি অনেক কৃষকেরই অজানা। সঠিক পরিকল্পনা ও যত্নে মরিচ চাষ করে আপনি সহজেই পেতে পারেন ভালো ফলন ও লাভ। চলুন জেনে নেওয়া যাক মরিচ চাষের ধাপে ধাপে পদ্ধতি।
জমি ও মাটি নির্বাচন:
মরিচ চাষের জন্য উঁচু এবং মাঝারি উঁচু জমি উপযোগী। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত, যার pH ৫.৫–৬.৫ এর মধ্যে। পানি জমে থাকে এমন জমিতে চাষ না করাই ভালো।
চারা তৈরি:
- ১ শতকে চারা তৈরি করতে ২০০–২৫০ গ্রাম বীজ যথেষ্ট।
- চারা তৈরির জন্য ভালো মানের বীজ নির্বাচন জরুরি।
- বীজ বপনের আগে ৮–১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়।
রোপণ ও দূরত্ব:
- চারা রোপণের জন্য বয়স ৩০–৩৫ দিন হলে উপযুক্ত।
- সারি থেকে সারি দূরত্ব: ৫০ সেমি
- গাছ থেকে গাছ দূরত্ব: ৪০ সেমি
- প্রতিটি গর্তে ১টি করে চারা রোপণ করুন।
সার ব্যবস্থাপনা :
প্রস্তাবিত মাত্রা:
প্রতি শতাংশ জমিতে প্রাথমিক পর্যায়ের সারের হিসাব:
সারের নাম | পরিমাণ |
---|---|
গোবর | ৮০-১২০ কেজি |
ইউরিয়া | ১.২৫ কেজি |
টিএসপি | ২.৫ কেজি |
এমওপি | ১.২৫ কেজি |
জিপসাম | ১ কেজি |
সার তিন ধাপে প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়:
- জমি প্রস্তুতের সময়
- চারা রোপণের ২০ দিন পর
- ফল ধরার সময়
সেচ:
গ্রীষ্মকালে সপ্তাহে একবার এবং শীতকালে ১০–১২ দিন পরপর সেচ দিন।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ:
আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে মালচিং ব্যবহার করুন।
সাধারণ রোগ ও প্রতিকার:
লিফ কার্ল ভাইরাস:
আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন, পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার করুন।
দাগ রোগ:
কার্বেন্ডাজিম বা কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করুন।
গাছ মারা যাওয়া:
প্রতি গর্তে ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ করুন।
পোকামাকড়:
থ্রিপস, জাব পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন করতে জৈব বা অনুমোদিত রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করুন।
ফসল সংগ্রহ:
- রোপণের ৭০–৮০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহ শুরু হয়।
- পরবর্তী ৪–৫ মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।
- প্রতি বিঘা জমি থেকে গড়ে ৪০–৫০ মণ পর্যন্ত মরিচ উৎপাদন সম্ভব।
পরবর্তী পরিচর্যা ও সংরক্ষণ:
- ফসল তোলার পর গাছগুলো পরিষ্কার করুন, প্রয়োজনে শুকনো পাতা পুড়িয়ে ফেলুন এবং পরবর্তী মৌসুমের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
উপসংহার:
সঠিক পরিকল্পনা, যত্ন এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে মরিচ চাষ হতে পারে এক লাভজনক কৃষি উদ্যোগ। বাজারে মরিচের চাহিদা সবসময়ই থাকে, তাই এটি চাষ করে একজন কৃষক সহজেই অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারেন।