লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত: উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা, দেশের কিছু এলাকায় অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা!

লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত: উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা, দেশের কিছু এলাকায় অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা!
আজ রাত থেকে বাংলাদেশের উপর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাব শুরুর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যার ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হবে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং বিশেষ করে চট্টগ্রাম ,নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা এবং বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া সহ ভারী বর্ষণ হতে পারে।
পাশাপাশি সিলেট জেলায় অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়ার সারাংশ:
- লঘুচাপের কেন্দ্র: বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমাংশে
- সম্ভাব্য অধিক প্রভাবিত অঞ্চল: চট্টগ্রাম বিভাগ, সিলেট বিভাগ ও বরিশাল বিভাগ।
- বৃষ্টির ধরন: হালকা থেকে অতিভারী
- ঝড়ো হাওয়া: ঘণ্টায় ৪০–৬০ কিমি বেগে বইতে পারে উপকূলীয় অঞ্চলে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এর তথ্য মতে,
- উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে।
- সকল সমুদ্র বন্দর সমূহকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মৌসুমী বায়ু:
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে,
আজ ঢাকা বিভাগের পূর্বাঞ্চল সহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্ৰসর হয়েছে।
তাপমাত্রা:
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা (২-৩ )ডিগ্ৰী হ্রাস পেতে পারে।
বৃষ্টিপাত:
আজ রাত থেকে – ৩১শে মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে ভারি বর্ষণ অতিবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ,রাঙামাটি, বান্দরবান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, গাজীপুর,ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ,মৌলভীবাজার, নরসিংদী ,সুনামগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট জেলা সমূহে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে । এই ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলা সমূহে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। ৩১ তারিখ পর্যন্ত ভারি বর্ষণ থাকলেও এই বৃষ্টিপাত ৪-৫ তারিখ পর্যন্ত থাকতে পারে। কিন্তু ৩১ তারিখের পর তীব্রতা কমতে শুরু করবে।

- লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় চর অঞ্চল গুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ভয়ে যাওয়ার ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের চাইতে ২-৩ ফুট বেশি উচ্চতা জোয়ার প্রবাহিত হতে পারে।
বন্যা সতর্কতা:
লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত শুধু বাংলাদেশ নয় ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়,সিকিমে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একই সময়ে ভারী বর্ষণ হতে পারে। যার প্রভাবে উজানের পানি ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বর্ষণের পানি একত্রিত হয়ে কুড়িগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী অঞ্চলের নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা সাময়িক সময়ের জন্য প্লাবিত হতে পারে। এই অতিরিক্ত পানি ১-৩ দিনের মধ্যে নেমে যাবে। কারণ এরপর লম্বা সময় বৃষ্টি গ্যাপ থাকবে। গত বছরের মত ভয়াবহ রুপ নিবে না। ভয়ের কারণ নেই।
তাপদাহ:
এই বৃষ্টিপাত বন্ধ হলেই আবার তীব্র গরম অতিবাহিত হবে।
কৃষকদের জন্য পরামর্শ:
- পাকা ধান দ্রুত ঘরে তুলে ফেলুন।
- নিচু জমিতে পানি জমা এড়াতে আগাম পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন।
- সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কাজ বৃষ্টির পরে করতে হবে।
- ক্ষেতে গাছের গোড়ায় মাটিচাপা দিয়ে শক্ত করে দিন যাতে বাতাসে গাছ পড়ে না যায়।
- ফসলি গাছে শক্ত খুটির ব্যবস্থা করুন।
- সবজির মাচায় শক্ত খুঁটির ব্যবস্থা করুন।
- এই সময় বীজতলা ভালো মানের পলিনেট দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- সংগ্ৰহ উপযোগী ফসল সংগ্রহ করে ফেলুন। যদি ৫ তারিখের পর সংগ্ৰহ উপযোগী হয় তবে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। বৃষ্টিপাত শেষে সংগ্ৰহ করতে পারবেন।
জেলেদের জন্য পরামর্শ:
- গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকাগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
- পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ।
- উপকূলবর্তী নদী ও খালে চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
মালবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযানের জন্য নির্দেশনা:
- দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকায় যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলাচল সীমিত রাখতে হবে।
- মালবাহী নৌযানগুলোকে অতিরিক্ত ওজন বহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
- সকল নৌযানে প্রয়োজনীয় লাইফ সেফটি উপকরণ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
সমাপ্তি:
সাম্প্রতিক লঘুচাপের প্রভাবে দেশের কিছু অঞ্চলে ভারী বর্ষণ এবং ঝড়ো হাওয়া দেখা দিতে পারে। কৃষি, মৎস্য এবং নৌযান চলাচলে সচেতনতা ও আগাম প্রস্তুতি আমাদের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমাতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলা সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরি।