জৈব সার তৈরির সহজ উপায় ও সুবিধা সমূহ

শুরুতে জেনে নিই জৈব সার মূলত কি?

এক প্রকার কার্বন (C) সমৃদ্ধ সার যা প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হয়। সার হল এমন কিছু উপাদান যা মাটি ও উদ্ভিদের পুষ্টি সরবরাহ ও বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য প্রয়োগ করা হয়। জৈব সারের মধ্যে রয়েছে খনিজ উৎস, সকল প্রাণীর বর্জ্য, তরল কম্পোস্ট এবং উদ্ভিদ নির্ভর সার যেমন: কম্পোস্ট, বায়োসলিড। এছাড়াও অন্যান্য অজৈব সার রয়েছে যা জৈব কৃষির মূলনীতি মেনে চলে এবং বাণিজ্যিক জৈব কৃষিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

জৈব সার হচ্ছে যেসব সার কোন জীবের দেহ থেকে প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ উদ্ভিদ বা প্রাণির ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া যায়। যেমন: গোবর সার, সবুজ সার, খৈল ইত্যাদি। গাছের প্রায় সব খাদ্য উপাদানই জৈব সারে থাকে।

চলুন এবার মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।

নিজের হাতে যে ভাবে তৈরি করবেন জৈব সার :

ভাবুন তো, আপনার রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া খোসা, পুরনো পাতা আর একটু গোবর একসাথে মিলে উৎকৃষ্ট সার তৈরি হয়ে যায়? হ্যাঁ, ঠিক তাই সম্ভব ।একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান তৈরি।

কেন জৈব সার ব্যবহার করবো?

মাটিকে প্রাণবন্ত রাখতে হলে তাকে খাবার দিতে হয়। রাসায়নিক সার যেমন ক্ষণস্থায়ী শক্তি দেয়, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে মাটির ক্ষতি করে। অথচ জৈব সার ধীরে ধীরে মাটির প্রাণ ফেরায়, গাছের শিকড় শক্ত করে, আর ফলনে আনে প্রকৃত স্বাস্থ্য। ফসল হয় অধিক সুস্বাদু।

চলুন এবার জৈব সার তৈরি শুরু করি : হাতের কাছেই পাবেন সব উপকরণ।

আপনার প্রয়োজন শুধু:

  • রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া শাকসবজির খোসা।
  • ফলের খোসা ও পুরনো পাতা।
  • সামান্য গোবর ।
  • কিছু মাটি
  • আর একটু ভালোবাসা ও ধৈর্য!

ধাপে ধাপে নিজের বাগানের জন্য নিজেই জৈব সার তৈরি করুন।

  • পাত্র ঠিক করুন: একটা বড়ো মাটির হাঁড়ি, ড্রাম, বা পুরনো টব বেছে নিন। নিচে কয়েকটা ইট বা কাঠের টুকরো রেখে হালকা ফাঁকা করে দিন যেন পানি বেরিয়ে যেতে পারে। সর্বপ্রথম শুকনো পাতা ও সামান্য মাটি দিয়ে একটি নরম বিছানা তৈরি করুন।
  • বর্জ্য যুক্ত করুন: প্রতিদিনের রান্নাঘরের সবজির খোসা, ফলের টুকরো, চা পাতা ইত্যাদি সংগ্রহ করুন। মাছ-মাংস বা প্লাস্টিক জাতীয় কিছু দেবেন না।
  • গোবরের ছিটা: মাঝে মাঝে সামান্য গোবর ছিটিয়ে দিন। এটা পচনের গতি বাড়াবে।
  • ভিজিয়ে রাখা: মাঝে মাঝে সামান্য পানি ছিটিয়ে দিন। লক্ষ্য রাখুন, বেশি ভিজে যেন কাদা না হয়ে যায়।
  • নাড়াচাড়া: প্রতি ৭ দিন পর একটা লাঠি দিয়ে সবকিছু ভালো করে উল্টে দিন। এতে বাতাস চলাচল বাড়বে। প্রায় ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে একরকম গন্ধহীন, নরম, কালচে মাটির মত সার তৈরি হবে।

এভাবে নিজের হাতে তৈরি জৈব সার যখন গাছের গোড়ায় দেবেন, তখন গাছ শুধু বড় হবে না, ফুল, ফল সবকিছুই হবে বেশি টেকসই ও স্বাস্থ্যকর। আর মাটি কৃতজ্ঞ হবে — একটুও বুঝতে পারবেন না, কখন আপনার ছোট্ট বাগান হয়ে উঠবে একটুকরো সবুজ স্বর্গ!

জৈব সার ব্যবহারের সুবিধা: 

  • জৈব সার  ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
  • মাটির প্রাণ ফিরিয়ে দিবে।
  • মাটির ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টেকশই করে।
  • খরচ সাশ্রয়ী করবে।
  • রাসায়নিক মুক্ত খাদ্য উৎপাদন হবে।
  • রোগবালাই কম হবে।
  • পচনশীল পদার্থ দিয়ে উৎপাদিত হয় বলে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে।
  • কীটনাশকের ব্যবহার কম লাগবে।

#নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জৈব সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিরাপদ খাদ্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তুলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *