“বৃষ্টির দিনে কই মাছ হাঁটে কেন? – বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের চেনা দৃশ্যের অজানা কারণ”

বৃষ্টির দিনে কই মাছ মাটির উপর উঠে আসে কেন? – বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের রহস্যভেদ
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন কালবৈশাখী বা প্রথম মৌসুমি বৃষ্টি নামে, তখন অনেকেই গ্রামের পথে, মাঠে, খেতের আইলে হঠাৎ কই মাছকে দেখা পান মাটির উপর চলাফেরা করতে। এই দৃশ্য যেমন বিস্ময়কর, তেমনই প্রকৃতির এক আশ্চর্য সুন্দর আচরণ। কিন্তু কেন কই মাছ বৃষ্টির সময় মাটির উপর উঠে আসে?
পানি ছাড়া স্থলভাগে কই মাছ বেঁচে থাকে কিভাবে?
কই মাছের এক অদ্ভুত ক্ষমতা – শ্বাস নেয় বাতাস থেকেও!
কই মাছ একটি ল্যাবিরিন্থ ফিশ (Labyrinth Fish)। এদের দেহে একটি বিশেষ শ্বাসপ্রণালী থাকে – যাকে বলে ল্যাবিরিন্থ অঙ্গ, যার সাহায্যে কই মাছ সরাসরি বাতাস থেকেও অক্সিজেন নিতে পারে। ফলে, যখন পানির অভাব হয় বা পানিতে অক্সিজেন কমে যায়, তখন কই মাছ মাটির উপর উঠে বাতাস থেকে শ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারে।
বৃষ্টির পানি আর কই মাছের ঘরছাড়া হওয়া
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন প্রথম বৃষ্টি হয়, তখন খরা ও শুকনো পুকুর-ডোবা অনেকটাই শুকিয়ে যায়। কই মাছ তখন অল্প পানিতে কোনো রকম জীবন ধারণ করে। বৃষ্টির পর ক্ষেতে বিলে জমা নতুন পানিতে কই মাছ বসবাস ও ডিম ছাড়ার উদ্দেশ্যে যায়। গভীর পানির ঘর ছেড়ে অল্প পানিতে যায়।
প্রজনন মৌসুমে কই মাছের চলাফেরা
- মূলত এই সময়টিই কই মাছের প্রজননের সময়। বর্ষার শুরুতে বৃষ্টি পেয়ে কই মাছ নতুন পানির খোঁজে, নিরাপদ স্থানে ডিম পাড়ার জন্য হাঁটতে শুরু করে। অনেক সময়েই এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সময় মাটির উপর দিয়ে অল্প দূরত্ব অতিক্রম করে।
- বৃষ্টির দিনে ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ – কই মাছের পছন্দ
- বৃষ্টির দিনে তাপমাত্রা কম থাকে, মাটি থাকে স্যাঁতসেঁতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি – এই পরিবেশ কই মাছের জন্য উপযোগী। তাই তারা নির্দ্বিধায় মাটির উপর উঠে আসে এবং খানিকটা পথ হেঁটে যায়।
গ্রামবাংলার অভিজ্ঞতা ও লোকজ বিশ্বাস
অনেক গ্রামাঞ্চলে প্রবীণরা বলেন – “বৃষ্টি পড়লেই কই মাছ ওঠে শ্বাস নিতে”। কেউ কেউ মনে করেন কই মাছের মাথা খারাপ হয়ে গেছে । আবার কেউ কেউ এটিকে শুভ লক্ষণও মনে করেন। যদিও এটি পুরোপুরি একটি প্রকৃতিগত ঘটনা, তবুও লোকজ জ্ঞানের সঙ্গে এর একটি মেলবন্ধন আছে।
উপসংহার
প্রকৃতি মাঝে মাঝেই আমাদের বিস্মিত করে। কই মাছের মাটির উপর উঠে আসা যেন বৃষ্টির আগমনী বার্তা, নতুন পানির উৎসবে তাদের ছোট্ট এক যাত্রা। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার পাশাপাশি এটি আমাদের গ্রামীণ জীবনের একটি চেনা অথচ অজানা অধ্যায়।