Education Science

সত্যিই কি পৃথিবী থেকে চাঁদের শুধুমাত্র একই পাশ দেখা যায়? ‘Tidal Locking’-এর রহস্য উন্মোচন

চাঁদ নিয়ে আগ্রহ এবং কৌতুহলের জন্ম হয়নি এমন মানুষ পাওয়া ভার। ছোট্টবেলায় চাঁদের পিছু পিছু হাঁটা  থেকে শুরু করে বড় হয়ে প্রেয়সীর মুখপানে চেয়ে চাঁদের আলো যদি ভালো লাগে কাল হয়ে যায় ঝাপসা, গানের সুরেও চাঁদের উপমার ব্যবহার করতে কেউ ভুলে না। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে চাঁদ নিয়ে আমাদের এত উৎসাহ আমরা পৃথিবী থেকে সবসময় শুধু মাত্র তার একই পাশ দেখতে পাই,তার পুরো রূপ কখনোই দেখি না? অন্য পাশ দেখতে হলে আমাকে এবং আপনাকে যেতে হবে মহাকাশে। চলুন তাহলে জানা যাক কেন পৃথিবী থেকে সবসময় চাঁদের শুধুমাত্র একই পাশ দেখা যায় ?

চাঁদ

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এটি পৃথিবী থেকে ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে এর চারপাশে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় আছে। এর ব্যাস প্রায় ৩,৪৭৪ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।চাঁদের পৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে, ফলে সেখানে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে ওঠানামা করে।চাঁদের অভিকর্ষ পৃথিবীর এক-ষষ্ঠাংশের সমান, ফলে সেখানে হাঁটা অনেকটা ভেসে চলার মতো।পৃথিবীর চারপাশে একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে এর ২৭ দিন সময় লাগে, যাকে বলা হয় sidereal month।তবে বিশেষত্ব হলো, চাঁদ নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুরতেও ঠিক একই সময় নেয় প্রায় ২৭.৩ দিন। এই চমৎকার সামঞ্জস্যই সৃষ্টি করে একটি মহাজাগতিক ঘটনা, যাকে বলা হয় “synchronous rotation” বা “tidal locking”

চাঁদের উৎপত্তি

চাঁদের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ রয়েছে। তবে চাঁদের উৎপত্তি নিয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত তত্ত্ব হলো “The Giant Impact Hypothesis” । এই মতবাদ অনুযায়ী ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহের সমআকৃতির একটি প্রোটোপ্ল্যানেট – Theia ( ধারনাকৃত গ্রহ) এবং পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে তাদের কিছু অংশ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এই গলিত পাথর এবং গ্যাস মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে চাঁদে পরিণত হয়।

অন্যান্য আরও কিছু মতবাদ যেমনঃ

Fission Theory– এই তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর অতি দ্রুত ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট সেন্ট্রিফিউগাল বলের ফলে পৃথিবীর কিছু অংশ ছিটকে বেরিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেই অংশ থেকেই চাঁদের সৃষ্টি হয়।

Capture Theory- এই তত্ত্ব অনুযায়ী, চাঁদ ছিল একটি ভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু যেটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলে আটকা পড়ে।

Co-formation Theory- এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সময়ে, একই গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ থেকে একসঙ্গে গঠিত হয়েছে।

এই মতবাদগুলোতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।

 

পৃথিবী থেকে সবসময় চাঁদের শুধুমাত্র একই পাশ দেখা যায় কেন?

পৃথিবী থেকে চাঁদের সবসময় একই পাশ দেখা যাওয়ার এই ঘটনাকে বলা হয় “synchronous tidal locking” । চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরতে সময় নেয় প্রায় ২৭.৩ দিন। একইসাথে চাঁদ নিজের অক্ষের চারদিকেও একবার ঘুরতে সময় নেয় প্রায় ২৭.৩ দিন। এই কারণে চাঁদ যতটুকু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, ততটুকুই নিজের অক্ষের চারদিকে ঘোরে। ফলে তার একটি নির্দিষ্ট পাশ সবসময় পৃথিবীর দিকে থাকে, আর অন্য পাশ চিরকাল আড়ালে রয়ে যায়। একে বলা হয় synchronous rotationtidal locking নামক প্রভাবের মাধ্যমে এটি ঘটে। চাঁদ যখন প্রথম তৈরি হয়েছিল, তখন এটি দ্রুত গতিতে নিজ অক্ষে আবর্তিত হতো। কিন্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের গতিকে ধীরে ধীরে কমিয়ে  দেয়। পৃথিবীর মহাকর্ষ চাঁদের অগ্রভাগ ও পশ্চাদ্ভাগের ওপর অসম টান তৈরি করে। এতে চাঁদের ঘূর্ণন শক্তি হ্রাস পেতে থাকে যতক্ষণ না এটি পৃথিবীর চারদিকে একবার পরিক্রমণের সময়ের সমান হয়ে যায়। এই অবস্থাই হলো tidal locking

সংক্ষেপে বললে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ চাঁদের ঘূর্ণনকে এমনভাবে আটকে দিয়েছে যে এটি নিজ অক্ষে ও কক্ষপথে ঘুরতে একই সময় নেয় ফলে আমরা সবসময় এর একই পাশ দেখি।

তাহলে চাঁদের আরেক পাশ কি আমরা কখনোই দেখি না?

চাঁদের যে পাশটি আমরা দেখতে পাই না, সেটিকে অনেক সময় “dark side of the Moon” বলা হলেও তা ভুল ধারণা। কারণ সেই অংশটি অন্ধকার নয়—চাঁদের মতোই আলো পড়ে, দিন-রাত হয়, সূর্যের আলো আসে। কিন্তু পৃথিবী থেকে তা দৃশ্যমান নয়।

Meherun Nahar Niha

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *