Uncategorized

নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশনের জন্ম: ব্রিটিশ শাসনামলের পরিকল্পনা।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নোয়াখালী এক সময় ছিল নদী-নালা ও খালবিল পরিবেষ্টিত একটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদ। নৌপথই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু কালের পরিক্রমায় যখন রেলপথের সম্প্রসারণ শুরু হলো, নোয়াখালীর মানুষ পেল এক নতুন আশার আলো। নোয়াখালী রেলপথ চালু হওয়া এই অঞ্চলের জন্য ছিল ঐতিহাসিক এক পরিবর্তন। আজ আমরা জানবো সেই রেলপথ চালুর পেছনের গল্প, উদ্দেশ্য এবং এর প্রভাব।

ব্রিটিশ আমলে রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা

নোয়াখালীর রেলপথের ইতিহাস শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে, আনুমানিক ১৯৩০ সালের দিকে এবং ধাপে ধাপে এটি ১৯৩১ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সারা ভারতবর্ষে রেলপথ সম্প্রসারণ করছিল মূলত প্রশাসনিক সুবিধা, পণ্য পরিবহন এবং কর আদায়ের জন্য।

নোয়াখালী ছিল পাট, ধান, মাছ, নারিকেল ও সুপারি উৎপাদনের একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। ব্রিটিশরা এই কৃষিপণ্য দ্রুত কলকাতা ও চট্টগ্রামে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। এজন্য কুমিল্লা থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নোয়াখালীর জীবনযাত্রায় বিশাল পরিবর্তন আসে। পূর্বে যাতায়াতের জন্য প্রধান ভরসা ছিল নদীপথ। নৌকা, লঞ্চ কিংবা খেয়া পারাপার ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ।

ব্রিটিশ আমলের রেলপথের বৈশিষ্ট্য

মিটার গেজ রেললাইন: শুরুতে মিটার গেজ (MG) লাইন স্থাপন করা হয়।

ইঞ্জিন চালিত স্টিম ট্রেন: প্রাথমিক ট্রেন ছিল কয়লাচালিত স্টিম ইঞ্জিন।

অল্প যাত্রীবাহী ট্রেন: দৈনিক কয়েকটি ট্রেন চলত।

পাকিস্তান আমলে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর, নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অধীনে চলে আসে।

পাকিস্তান আমলে রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও নতুন ট্রেন সংযোজন তেমন হয়নি।

রেলপথ তখন মূলত কৃষিপণ্য ও সামরিক রসদের জন্য ব্যবহৃত হতো।

ঐতিহাসিক সময় ও মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পূর্বে এই রেলপথ কলকাতা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগের অন্যতম পথ ছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে রেললাইন ছিল প্রশাসনিক ও সামরিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় (১৯৭১ সালে) নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি সেনারা রেললাইন ব্যবহার করে নোয়াখালী দখলের চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে এই লাইন ক্ষতিগ্রস্ত করে শত্রুপক্ষের চলাচল বন্ধ করে দেয়। নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

বর্তমানে নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন

একটি সক্রিয় এবং আধুনিক স্টেশন হিসেবে কাজ করছে। এখানে প্রতিদিন ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন চলে।

উল্লেখযোগ্য ট্রেনসমূহ:

🚂 উপকূল এক্সপ্রেস :- এই ট্রেনটি বুধবার ব্যতীত সপ্তাহের ছয় দিন ভোর ৬.০০টা বাজে ঢাকায় উদ্দেশ্যে নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন ত্যাগ করে। আবার ট্রেনটি মঙ্গলবার ব্যতীত সপ্তাহের ছয় দিন দুপুর ৩.১০ মিনিটে  নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (ঢাকা) ত্যাগ করে।

🚂 নোয়াখালী এক্সপ্রেস :- (এই ট্রেনটির আসা/যাওয়া সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নাই , আপনাদের কারো জানা থাকলে আমাদেরকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন)

🚂 সুবর্ণচর এক্সপ্রেস :- (সরকারের পক্ষ থেকে এই ট্রেনটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও,এখনও চালু হয়নি) কবে চালু হবে এর সঠিক তথ্য জানা নাই

পরিশেষে

নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন শুধুই একটি স্টেশন নয়, এটি একটি ইতিহাস, একটি উন্নয়নের গল্প। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং আজকের আধুনিক বাংলাদেশ—সবকিছুতেই এই স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই অগ্রগতি নোয়াখালীকে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চলে পরিণত করেছে।

নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন এখনো নীরবে দাঁড়িয়ে, পথ দেখাচ্ছে হাজারো যাত্রীর, অগণিত স্বপ্নের।

Sheikh Farid Uddin

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Uncategorized

আস-সালাম জামে মসজিদ, লক্ষ্মীপুরে নান্দনিক স্থাপত্য ও ইসলামী ঐতিহ্যের মিলনস্থল।

সংক্ষিপ্ত পরিচয় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা এলাকায় অবস্থিত আস-সালাম জামে মসজিদ একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য
Uncategorized

ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী।

সংক্ষিপ্ত পরিচয় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো শুধু শিক্ষাদানের জন্য নয়, নৈতিকতা, মানবতা এবং নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও অনন্য