Agro

নারিকেল চাষ: সঠিক কৌশলে ফলন বাড়ান

নারিকেল চাষ:

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ অনেক জেলায় নারিকেল চাষ এক গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক কৃষি খাত। বৃষ্টি প্রধান অঞ্চলে নারিকেল ভালো হয়। জলবায়ু উপযোগী হলে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে এই গাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ফলন পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক নারিকেল চাষাবাদের সঠিক পদ্ধতি, চাষের কৌশল এবং ফলন বৃদ্ধির উপায়।

মাটি ও জলবায়ু:

মাটি: নারিকেল চাষের জন্য বেলে-দোঁআশ বা দোঁআশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। পানি যেন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

জলবায়ু: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু নারিকেল চাষের জন্য উত্তম। ২৫-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো ফলন হয়।

নারিকেল চারা রোপণ

চারা নির্বাচন: ১০-১২ মাস বয়সী রোগমুক্ত সুস্থ নারিকেলের চারা নির্বাচন করতে হবে।

গর্তের আকার: ১ মিটার × ১ মিটার × ১ মিটার আকারের গর্ত খনন করে তার মধ্যে গোবর, ছাই, সার ইত্যাদি মিশিয়ে  ২-৩ সাপ্তাহ পর্যন্ত রেখে দিতে হবে।

চারা রোপণ সময়: নারিকেল চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বর্ষার শুরুতে (জুন-জুলাই)। এই সময় চারা দ্রুত বেড়ে উঠে।

নারিকেল গাছের পরিচর্যার কৌশল

  • শুকনো মৌসুমে প্রতি দিন পানি দিতে পারলে নারিকেল গাছ থেকে সারা বছর কাঙ্ক্ষিত ফলন উৎপাদন করা সম্ভব। একটি নারিকেল গাছে শুষ্ক মৌসুমে দৈনিক কমপক্ষে ৫০ লিটার পানির প্রয়োজন হয় ।
  • বর্ষায় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে পারলে ভালো। এতে গাছের শিকড় পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পাবে।

আগাছা পরিস্কার: চারা ছোট অবস্থায় গাছের গোড়ায় আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। গাছ বড় হয়ে গেলে তেমন আগাছা হয় না। নিয়মিত পরিস্কার রাখলে ফলন ভালো হয়।

সার প্রয়োগ:

গাছ প্রতি সারের হিসাব,

সারের নাম পরিমাণ
        গোবর             ২০-৩০ কেজি
       ইউরিয়া             ৩০০-৫০০ গ্ৰাম
       টিএসপি             ২০০-৩০০ গ্ৰাম
       এমওপি             ৫০০-৭০০ গ্ৰাম

সার প্রয়োগ দুই ভাগে ভাগ করে বর্ষার শুরু এবং শেষে দেওয়া ভালো।

নারিকেল গাছের রোগ ও পোকামাকড় দমন

রোগ: পাতার দাগ, মুল পচা, নারিকেল শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার:

  • ট্রাইডারমা বা বাভিস্টিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • চুন, ছাই ও জৈব সার দিয়ে মাটি উন্নত রাখা উচিত।
  • পোকামাকড়ের জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে।

নারিকেলের ফলন বৃদ্ধির কৌশল

  • গাছের গোড়ায় জৈব সার ও ছায়া বজায় রাখা।
  • ফুল ফোটার সময় সঠিক পরিমাণে পানি ও সার দেওয়া।
  • গাছের নিচে ঘাস বা অন্য ফসল (ইন্টারক্রপিং) চাষ করলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে।
  • নিয়মিত পরিস্কার ও গাছ পর্যবেক্ষণ করা।
  • শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন ৫০ লিটার পানি দেওয়া।

 নারিকেল চাষে লাভ:

  • একটি সুস্থ নারিকেল গাছ ৫-৭ বছর বয়সে ফল ধরা শুরু করে।
  • গড়ে ৫০-৬০ বছর ফল দিতে পারে।
  • প্রতি গাছ থেকে বছরে ৫০-১৫০টি নারিকেল/ ডাব পাওয়া যায় — সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে যা আরও বাড়ানো সম্ভব।

 উপসংহার

নারিকেল চাষ আমাদের দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক একটি ক্ষেত্র। সঠিক কৌশলে চাষ ও পরিচর্যা করলে কম খরচে অধিক লাভ অর্জন সম্ভব। নতুন কৃষক বা উদ্যোক্তার জন্য নারিকেল চাষ হতে পারে একটি টেকসই সম্ভাবনার ক্ষেত্র।

 

 

Meherab Hossain

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Agro

জৈব সার তৈরির সহজ উপায় ও সুবিধা সমূহ

শুরুতে জেনে নিই জৈব সার মূলত কি? এক প্রকার কার্বন (C) সমৃদ্ধ সার যা প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হয়। সার হল
Agro

বাংলাদেশের কৃষি ও দরিদ্রদের দুষ্ট চক্র

♥ পরিচিতি: বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ।শ্রমশক্তি জরুরি ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী,এই দেশের শতকরা ৪৫ শতাংশ মানুষ কৃষি জাত পেশার সাথে