পেঁপে চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন — সহজ সমাধান ও প্রতিরোধমূলক উপায়

পেঁপে চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড়: সমস্যা ও প্রতিকার
পেঁপে আমাদের দেশে একটি পরিচিত ও পুষ্টিকর ফল। তবে এ ফল চাষে সঠিক যত্ন না নিলে নানা রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। নিচে পেঁপে চাষে সাধারণত যে সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
১. ড্যাম্পিং অফ রোগ (Damping Off)
এটি মূলত চারার সময় দেখা যায়। মাটিতে বিদ্যমান ছত্রাক বীজ বা অঙ্কুরকে আক্রমণ করে চারা নষ্ট করে ফেলে।
লক্ষণ:
- বীজ গজানোর আগেই পচে যায়
- চারা মাটির ওপরে উঠতে পারে না
- চারার গোড়া পচে গিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে
প্রতিকার:
- বীজতলার মাটি শুকনো রাখতে হবে
- সিকিউর ছত্রাকনাশক ২-৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজে মিশিয়ে শোধন করতে হবে
- আক্রান্ত চারা তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে
- বেশি আক্রমণে রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৭ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে
২. ঢলে পড়া ও কাণ্ড পঁচা রোগ
বর্ষাকালে বা অতিরিক্ত স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে গাছের গোড়ায় বাদামী রঙের পানি ভেজা দাগ দেখা যায়, যা কাণ্ডপচা রোগের লক্ষণ।
প্রতিকার:
- সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে
- বীজতলা সবসময় শুষ্ক রাখা উচিত
- আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে
- রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রয়োগ করলে ভালো ফল মেলে।
৩. মোজাইক রোগ
এটি ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক রোগ।
লক্ষণ:
- পাতায় হলুদ ছোপ ছোপ দাগ
- পাতার ডাঁটা বাঁকা হয়ে যায়
- গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়
প্রতিরোধ ও প্রতিকার:
- আক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে
- জিংকের ঘাটতির কারণে এ সমস্যা আরও বাড়তে পারে।তাই,
- গাছ প্রতি গোড়ায় ৫-১০ গ্রাম জিংক
- পাতায় ০.২% জিংক স্প্রে করতে হবে
রোগবাহী পোকা দমন করতে হবে
নোভাস্টার ৫৬ ইসি ০.২ মিলি অথবা এডমায়ার ২০০ এসএল ০.১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
৪. মিলিবাগ পোকা
এই ক্ষুদ্র পোকাটি পেঁপের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
লক্ষণ:
- পাতা ও ফলে সাদা তুলার মতো আবরণ
- ফল ও পাতায় কালো ছোপ ও ছাঁচের মতো দাগ (সুটি মোল্ড)
- গাছ দুর্বল হয়ে মারা যেতে পারে
প্রতিকার:
- আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
বেশি আক্রমণে:
- এডমায়ার ২০০ এসএল ০.২৫ মিলি বা
- ৫ গ্রাম সাবানের পানি মিশিয়ে ৫-৭ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
উপসংহার:
পেঁপে চাষে সঠিক যত্ন ও সময়োপযোগী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। নিয়মিত গাছ পর্যবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বীজতলা এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহারে সুস্থ ও লাভজনক পেঁপে চাষ নিশ্চিত করা যায়।