Home » ভাটিয়ারী লেক—পাহাড়, নীল জল, সূর্যোদয় আর বরশির দিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা। প্রকৃতি যেখানে নীরবতার ভাষায় কথা বলে।

ভাটিয়ারী লেক—পাহাড়, নীল জল, সূর্যোদয় আর বরশির দিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা। প্রকৃতি যেখানে নীরবতার ভাষায় কথা বলে।

ছবি: ভাটিয়ারী লিংক রোডের সূর্যাদয়

পরিচিতি:

চট্টগ্রামের ব্যস্ত শহর থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে, সীতাকুণ্ডের কোলে নিভৃতে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রকৃতির লুকানো রত্ন—ভাটিয়ারী লেক। পাহাড়ের বুক চিরে গড়ে ওঠা এই লেক যেন এক অলিখিত কবিতা, যেখানে প্রতিটি ঢেউ বলে যায় নির্জনতায় শান্ত থাকার গল্প। সূর্যোদয়ের মায়াবী আলো, বরশি দিয়ে মাছ ধরা, আর রঙিন সূর্যাস্ত—সব মিলিয়ে এটি নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ গন্তব্য ভ্রমণপিপাসুদের জন্য।

ভাটিয়ারীর লেকের জন্ম ও ইতিহাস:

ভাটিয়ারী লেক কোনো প্রাচীন জলাধারা বা নদীর অংশ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গর্বিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (BMA) প্রশিক্ষণ সুবিধার অংশ হিসেবে তৈরি একটি কৃত্রিম জলাধার। পাহাড়ের ঢালুতে পানি আটকে রেখে গড়ে তোলা হয় এই লেকটি। সামরিক প্রশিক্ষণ ও গলফ খেলার জন্য ব্যবহৃত হলেও, এর সৌন্দর্য এতটাই মুগ্ধকর যে সাধারণ পর্যটকরাও এখানে ছুটে আসেন প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে।

সূর্যোদয়:

দিনের শুরু, মনের জাগরণ ভোরের সময় ভাটিয়ারী যেন একেবারে অন্যরকম। চারপাশে পাখির ডাক, হালকা কুয়াশা, আর পাহাড়ের আড়াল থেকে ধীরে ধীরে উদয় হওয়া সূর্য—এ এক শব্দহীন কবিতা। যারা প্রকৃতির গভীরতায় ডুবে যেতে চান, তাদের জন্য সূর্যোদয় দেখা এখানে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।

বরশি ফেলে মাছ ধরা:

প্রকৃতির সাথে নিরব সংলাপ।লেকের ধারে বসে বরশি ফেলে সময় কাটানো এখানে যেন এক ধ্যানের মতো। কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় অনুমতি নিয়ে মাছ ধরার সুযোগ আছে।

মাছের ধরন: রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, মৃগেল,কালিবাউস,সরপুটি, শিং সহ নানান জাতের মাছ।

সময়: সকাল বা বিকেল বেলায় মাছ ধরা সবচেয়ে উপযোগী সময়। এখানে মাছ ধরতে নাম মাত্র মূল্যে টিকেট নিতে হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ।

উপকরণ: বরশি, কেঁচো বা কৃত্রিম টোপ, পাউরুটি, পিঁপড়ার ডিম, সুগন্ধি চার,ছাতু, মধু প্রয়োজন বোধে অন্যান্য উপকরণ।

কিভাবে যেতে হয় ভাটিয়ারী?

চট্টগ্রাম শহর থেকে: প্রাইভেট কার, সিএনজি বা লোকাল বাসে ৩০–৪৫ মিনিট

মূল গেট: BMA চেকপোস্টে পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে হয়।

স্থানীয় গাইড: চাইলে স্থানীয় গাইড বা পরিচিত কারও সহায়তা নিতে পারেন। খুব একটা প্রয়োজনীয় নয়।

থাকা ও খাওয়া

থাকা:

চট্টগ্রাম শহরে থাকা সবচেয়ে সুবিধাজনক। তাছাড়া

কাছাকাছি কিছু গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট (সীতাকুণ্ড, ফৌজদারহাট)

খাওয়া:

  • Bhatiary Golf Club–এ মানসম্মত রেস্টুরেন্ট।
  • লেকপাড়ে চা-সিঙ্গারার দোকান।
  • শহরে ফিরে বিখ্যাত মেজবানি খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

কেন যাবেন ভাটিয়ারীতে?

  • প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্বাদ।
  • শান্ত পরিবেশে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত‌।
  • বরশি দিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা।
  • পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটার রোমাঞ্চ।

বিশেষ করে ভাটিয়ারী লিংক রোড আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। দেশে এতো সুন্দর এবং নিরাপদ রাস্তা আপনি খুব কম ই পাবেন। তাছাড়া সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত আপনাকে বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা দিবে।

 

শেষ কথাঃ

ভাটিয়ারী লেক আপনাকে কেবল প্রকৃতির রূপ দেখাবে না।—এটি আপনাকে প্রকৃতির সাথে যুক্ত হতে শেখাবে। এই লেকের ধারে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেই মনটাও ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যাবে। যদি একটুখানি প্রশান্তি খুঁজে বেড়ান, তাহলে একদিনের জন্য হলেও ভাটিয়ারী চলে যান।

আপনি যদি প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, তাহলে এই গন্তব্য আপনাকে নিরাশ করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *