Travel

কাপ্তাই লেক বাংলাদেশের সৌন্দর্যের ভূ-স্বর্গ ~ জল পাহাড় আর রোমাঞ্চের অভিযান! অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য স্বপ্নের গন্তব্য!

পরিচিতি : 

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলা যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়! আর তার হৃদয়ে অবস্থিত কাপ্তাই লেক।এটি কৃত্রিম লেক। কাপ্তাই লেক সৌন্দর্য্যে একেবারেই স্বর্গীয়। পাহাড়, মেঘ আর সবুজের মিতালীতে গড়ে ওঠা এই লেক দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম লেক হিসেবে পরিচিত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপার মহিমা:

১১০০০ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল কাপ্তাই লেকে নৌকায় ভাসতে ভাসতে চোখে পড়বে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, সবুজ বনভূমি, বাহারি রঙের নৌকা আর প্রাণবৈচিত্র্য। বর্ষাকালে মেঘ আর জলের খেলা, এখানে এক অনন্য দৃশ্যের জন্ম দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন লেকের মাঝে দ্বীপ সাদৃশ পাহাড়। এই লেক প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একবার নয়, বারবার ফেরার জায়গা।

ছবি: নেভি ক্যাম্প থেকে কাপ্তাই লেক

ইতিহাসের পাতায় কাপ্তাই:

১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্ণফুলী নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, যার অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে রাঙ্গামাটির প্রায় ৫৪,০০০ একর কৃষিজমি প্লাবিত হয়ে গড়ে ওঠে এই বিশাল কৃত্রিম জলাশয়।

 

কাপ্তাই লেকে যা যা দেখবেন:

রাজবন বিহার: বাংলাদেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার।

চাকমা রাজার বাড়ি: পুরাতন রাজবাড়ি বাঁধের কারণে ডুবে গেলেও নতুন রাজবাড়ি এখনো পর্যটকদের আর্কষণ করে।

শুভলং ঝর্ণা: বর্ষায় উচ্ছ্বল; দুটি ঝর্ণার যৌথ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

পেদা টিং টিং ও টুকটুক: জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট ও ভ্রমণ স্থান।

পলওয়েল পার্ক ও ঝুলন্ত ব্রীজ: রাঙ্গামাটির সিগনেচার স্পট।

কায়াকিং ও প্যাডেল বোট: রিজার্ভ বাজার বা ঝুলন্ত ব্রীজ থেকে উপভোগ করতে পারবেন।

কিভাবে যাবেন?

 

ঢাকা থেকে: বাসে সরাসরি রাঙ্গামাটি (৭-৮ ঘণ্টা)। বাস ভাড়া: নন-এসি ৮৫০–৯০০৳, এসি ১২০০–১৭০০৳।

চট্টগ্রাম থেকে: ২ ঘণ্টার বাস ভ্রমণ (ভাড়া ১৭০৳)। বিআরটিসি এবং পাহাড়িকা বেস্ট অপশন।

সাজেক/খাগড়াছড়ি থেকে: খাগড়াছড়ি হয়ে লোকাল বাস বা রিজার্ভ গাড়িতে সহজেই রাঙ্গামাটি।

নৌকা বা বোট ভ্রমণ:

রিজার্ভ বাজার বা ঝুলন্ত ব্রীজ থেকে বোট/স্পিডবোট ভাড়া করে ঘুরে নিতে পারেন পুরো লেক। প্যাডেল বোট, কায়াক বোটসহ বিভিন্ন অপশন রয়েছে। যোগাযোগ: +8801841862600

ছবি: নৌকা ভ্রমণে কাপ্তাই লেক

খাবার-দাবার

কাপ্তাই লেকের মধ্যে বিখ্যাত রেস্তোরাঁ:

  • ঝুমঘর
  • টং ঘর
  • পেদা টিং টিং
  • চাং পাং

জনপ্রিয় খাবার:

  • ব্যাম্বু চিকেন
  • কাচকি মাছ ফ্রাই
  • ছাপিলা মাছ
  • রুই কেবাং
  • পাহাড়ি চা।

নৌবাহিনির ভাসমান রেস্টুরেন্ট-এও খেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন?

 

হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনাল: রিজার্ভ বাজারেই অবস্থিত, লেকভিউ বারান্দাসহ।

যোগাযোগ: +8801841862600

ইকো রিসোর্ট ও হাউজ বোট: আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ও জনপ্রিয়।

সরকারি রেস্ট হাউজ: বন বিভাগ, সেনাবাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ড ইত্যাদির।

কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান

  • রাজবন বিহার
  • চাকমা রাজার বাড়ি
  • শুভলং ঝর্ণা
  • কাপ্তাই বাঁধ
  • নেভি একাডেমি
  • পলওয়েল পার্ক
  • ঝুলন্ত ব্রীজ
  • কর্ণফুলি নদী
ছবি: কাপ্তাই বাঁধ

ভ্রমণে করণীয়

  • স্থানীয়দের অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না।
  • স্থানীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।
  • আর্মি ক্যাম্পে ছবি তোলা নিষিদ্ধ।
  • আগে থেকেই হোটেল/নৌকা বুক করুন।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
  • লেকে ভ্রমনের সময় বোটের ডাস্টবিন ব্যবহার করে পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন।

এই লেক শুধু একটি পর্যটন স্পট নয়, এটি আমাদের প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। কাপ্তাই লেকে ভ্রমণ আপনার মন ও মননকে ছুঁয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।

ছবি:কাপ্তাই লেক থেকে সূর্যাস্ত

Meherab Hossain

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Travel

নিঝুম দ্বীপ যাতায়াত: কিভাবে নিঝুম দ্বীপ যাবেন (ভ্রমণ গাইড)

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিঝুম দ্বীপ যাতায়াত কিভাবে করবেন, তা জানতে চান? নিঝুম দ্বীপ (যাকে নীল দ্বীপও বলা হয়) বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি
Travel

ঢাকা থেকে মুছাপুর ক্লোজার (নোয়াখালী) যাওয়ার সহজ উপায় ও ভ্রমণ গাইড

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মুছাপুর ক্লোজার একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থান, যা স্থানীয়ভাবে “মিনি কক্সবাজার” নামে