মহামায়া লেক পাহাড়ের ছায়া, সবুজের মায়া আর শান্ত জলরাশির মৃদু ঢেউ—এই তিনে মিলে গঠিত হয়েছে মোহময় দৃশ্যপট । মহামায়া লেক যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা এক প্রেমপত্র। ভ্রমণ পিপাসুদের হৃদয়ে গেঁথে দেয় নির্জনতায় ডুবে যাওয়ার আকুলতা। মায়াবী পরিবেশ, নিরিবিলি প্রকৃতি আর পাহাড়ি ঝর্ণার ছন্দে লেকটি যেন এক প্রেমকাহিনির দৃশ্যমালা।পাহাড়, লেক আর নিরবতা—ত্রিমাত্রিক ভালবাসা।
মহামায়া লেক পরিচিতি:
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ।এর আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০০৭-২০০৮ সালে। এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালে।লেকটি তৈরি করতে ৮২৯৯ একর জমি ব্যবহার করা হয়। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কাপ্তাই লেকের পর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক।

লেকের জলরাশি ঘিরে রয়েছে সবুজ পাহাড়, পাহাড়ি ঝর্ণা,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন বিনোদনের সুযোগের জন্য পর্যটকদের কাছে দারুন জনপ্রিয়।
অবস্থান:
মহামায়া লেক চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। মীরসরাই উপজেলার ঠাকুরদিঘি বাজার থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পূর্বে, দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালের উপর একটি সুইচ গেট স্থাপনের মাধ্যমে এই লেকটি গঠিত হয়।
মহামায়া নামকরণ কিভাবে হল:
‘মহামায়া’ নামটি এসেছে স্থানীয় মহামায়া দেবীর নাম থেকে। মহামায়া নামটি হিন্দু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের একান্ত ভাবে জড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলে মহামায়া দেবীর মন্দির ছিল বলে জানা যায়। স্থানটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে প্রচলিত। দেবীর নাম অনুসারেই এই লেকের নাম রাখা হয়েছে মহামায়া লেক।
মহামায়া লেক যা পাবেন:
- নৌকা ভ্রমণ
- ট্রেইল হাঁটা (পাহাড়ি পথ)
- ফটোগ্রাফি
- সবুজ নিরিবিলি পরিবেশ
- কায়াকিং
- বরশি দিয়ে মাছ ধরা
- ঝর্ণায় গোসল

খরচ:
- কায়াক ভাড়া: ৩০০ টাকা/ঘণ্টা (প্রায়)
- ইঞ্জিনচালিত নৌকা: ৮০০-১২০০ টাকা (দল ও সময় ভেদে)
- প্রবেশ ফি: ২০-৩০ টাকা

বরশি দিয়ে মাছ ধরার টিকেট ১৫০০ টাকা( ২৪ ঘন্টা)
পাহাড় ও ঝর্ণা: লেকের চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড় এবং পাহাড়ি ঝর্ণা, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
ক্যাম্পিং: প্রাকৃতিক পরিবেশে রাত কাটানোর জন্য ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে মহামায়া লেকে ক্যাম্পিং করার অনুমতি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য সীমাবদ্ধ।
কিভাবে যাবেন_
ঢাকা থেকে: ঢাকা থেকে বাসে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘি বাজারে এসে সেখান থেকে সিএনজি বা অটো রিকশায় মহামায়া লেকে পৌঁছানো যায়।
খরচ : বাসে সায়দাবাদ থেকে ঠাকুরদিঘি পর্যন্ত বাস (ভাড়া: ৫৫০-৬৫০ টাকা)
সেখান থেকে ২ কিমি দূরে মহামায়া লেক।সিএনজি ভাড়া (ঠাকুরদিঘি বাজার থেকে মহামায়া লেক): ৫০-৭০ টাকা
চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রাম শহর থেকে বাস দিয়ে ঠাকুরদিঘি বাজারে এসে সেখান থেকে মহামায়া লেকে যাওয়া যায় ।
খরচ: বাস ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।
সেখান থেকে ২ কিমি দূরে মহামায়া লেক।সিএনজি ভাড়া (ঠাকুরদিঘি বাজার থেকে মহামায়া লেক): ৫০-৭০ টাকা
থাকার ব্যবস্থা:
মিরসরাইয়ে মানসম্মত আবাসিক হোটেল সীমিত। তবে সীতাকুণ্ড বা চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল পাওয়া যায়।
- ফেনী শহরে এসেও থাকতে পারবেন।
খাবার:মহামায়া লেকের আশেপাশে খাবারের দোকান সীমিত। মোটামুটি মানের খাবার খেয়ে থাকতে হবে।
তবে পাহাড়ে চাষ করা ফলমূল পাওয়া যায়।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান:
মহামায়া লেক ভ্রমণের সাথে সাথে আপনি গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। ভালো লাগবে । কাছাকাছিতে আছে।
“মহামায়া লেক প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। যেখানে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। “

শেষে এক টুকরো অনুভূতি:
মহামায়া লেক শুধুই জলাধার নয়, এটি প্রকৃতির হৃদস্পর্শী কবিতা। এখানে এলেই বোঝা যায়—প্রকৃতির সঙ্গে প্রেম করা যায়।

“নির্জনতা কখনো কষ্ট নয়, বরং আত্মা ছোঁয়া এক আনন্দ”।