পরিচিত:
- বাংলাদেশের দক্ষিণের বিভাগ চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার ছোট একটি দ্বীপ এই নিঝুম দ্বীপ।
- নোয়াখালী কে নিঝুম দ্বীপের দেশ বলা হয়। নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী জেলার সর্বো দক্ষিণে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ।
- নিঝুম দ্বীপের নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক মায়া।
- প্রাকৃতিক সুন্দর্যে ভরপুর একটি দ্বীপ। সম্ভবত এই কারণে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা এই দ্বীপ। যার চার পাশেই সাগর।
- ভূপ্রকৃতি গত কারণে পুরো দেশের মত উন্নয়ন নিঝুম দ্বীপে লাগে নি। সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় কিছু উন্নয়ন স্বাদিত হয়েছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে দ্বীপটি পিছিয়ে আছে।সাম্প্রতিক সময়ে যাঁরা নিঝুম দ্বীপ গেছেন, তাঁদের কাছে মনে হয়েছে দেশের সব চেয়ে অনুন্নত একটি অঞ্চল ।
- যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রায় পুরোটাই ভঙ্গুর। নিঝুম দ্বীপে নেই তেমন কোনো ভালো যানবাহনও। দ্বীপের প্রধান যানবাহন মোটর সাইকেল। এখানে মটর সাইকেলে করে যাত্রী পরিবহন করা হয় । তাছাড়া এলপিজি সিলিন্ডার চালিত কয়েকটি সিএনজি ও রয়েছে।
নিঝুম দ্বীপের নামকরণ যে ভাবে করা হয়:
- ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে সর্বো প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসতি গড়েন। তখন এই নামের উপর দ্বীপের নামকরণ করা হয়ে ছিলো। আবার যখন মানুষ বসতি গড়ে তোলে ঐ সময় চরে প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যেতো। নোয়াখালী অঞ্চলের চিংড়ির স্থানীয় নাম ইছামাছ। তাই স্থানীয়দের কেউ কেউ একে ইছামতির চরও বলতো। ৭০ এর ঘূর্ণিঝড় এর পর হাতিয়ার সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম ক্ষয় ক্ষতি পরিদর্শনে গেলে জনমানবহীন এই দ্বীপের নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন।
অবস্থান :
-
নিঝুম দ্বীপ ১৯৪০ সালের দিকে বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় ধীরে ধীরে জেগে ওঠে। এরও প্রায় এক দশক পর দ্বীপে মানুষের আসা-যাওয়া শুরু হয়।তবে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে দ্বীপের প্রায় সব মানুষ মারা যায়। তখন দ্বীপটি হয়ে যায় জনমানব শূন্য। এর পরবর্তীতে দ্বীপে আবার মানুষ আসা শুরু করে।
- বর্তমানে দ্বীপটিতে ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করে,২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী। দ্বীপে বসবাসরত মানুষের প্রধান জীবিকা নির্বাহকারী পেশা হচ্ছে জেলে, কৃষক ও পশু পালনকারী । জেগে ওঠা এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।ছোট–বড় ১১টি চর নিয়ে নিঝুম দ্বীপ গঠিত। নিঝুম দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, দ্বীপটির আয়তন বর্তমানে ৮০ বর্গ কিলোমিটার যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত দ্বীপ টি ছিল জাহাজমারা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ওয়ার্ড থেকে দ্বীপকে সতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
- নিঝুম দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০০১ সালে সরকার দ্বীপের ৯,৫৫০ একর বনভূমি সহ ৪০,৩৯০ একর এলাকা জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। সরকার ২০১৯ সালে দ্বীপের আশেপাশের জলসীমা ‘নিঝুম দ্বীপ মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করে।
নিঝুম দ্বীপ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা:
- ভূপ্রকৃতি গত কারণে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় প্রোভন এলাকার গুলোর মধ্যে অন্যতম।এই ঘূর্ণিঝড় মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূল রক্ষায় নিঝুম দ্বীপে ষাটের দশকের প্রথম দিকে কৃত্রিম সুন্দরবন সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশ স্বাধীনের পরও তা চলমান থাকে। সেই উদ্দেশ্যে এখানে ম্যানগ্ৰোভ বনাঞ্চলের গাছ লাগানো হয়। ধীরে ধীরে সেখানে শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) গাছের চারাগুলো মাথা তুলে দাঁড়ায়। ১৯৭৪ থেকে ৭৯ সালের মধ্যে বন বিভাগ নিঝুম দ্বীপে ১৪টি হরিণ অবমুক্ত করে। হরিণের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালের শুমারিতে দেখা যায়, দ্বীপটিতে হরিণের সংখ্যা বেড়ে ২২ হাজার হয়েছে। এখন সেখানে হরিণের সংখ্যা দুই হাজারও হয় কি না সন্দেহ।
- দ্বীপবাসীর ভাস্য মতে এক সময় দ্বীপের চারদিকে খালি হরিণ আর হরিণ ছিল। এত বেশি হরিণ ছিল যে মানুষ গণনা করা যেত কিন্তু হরিণ গণনা করা কঠিন ছিল। এখন হরিণ দেখায় যায় না অন্যদিকে মানুষ গণনা করে কূল পাওয়া যায় না।
- বন তৈরির শুরুতে নিঝুম দ্বীপে চার ধরনের গাছ লাগানো হয়—কেওড়া, গেওয়া, বাইন ও কাঁকড়া। কেওড়াগাছের পাতা আর দূর্বা ঘাস হরিণের পছন্দের খাবার। যে সময় হরিণ ছাড়া হয়, তখন এই বনের কেওড়াগাছের উচ্চতা হরিণের নাগালের মধ্যেই ছিল। হরিণের খাবার হিসাবে বন জুড়ে কেওড়া গাছ ছিল অফুরান। আর হরিণ শিকার করে খাবে, এমন কোনো প্রাণীই বনে ছিল না।তাই জোরে সরে হরিণের বংশবিস্তার ঘটতে থাকে।অবাক করার বিষয় মাত্র ১৪ টি হরিণ থেকে দুই দশকের মধ্যে হরিণের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় ২২ হাজারে। বন বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারি থেকে এই সংখ্যা ।
- হরিণ শুমারির তথ্য মতে ২০০৬ সালে নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি ছিল। এই সংখ্যা ২০১৫ সালে দুই হাজারের নিচে নেমে আসে। ২০২৪ সালের বন বিভাগের তথ্য মতে, তাদের নিয়মিত টহলে ১ মাসে মাত্র ৮ টি হরিণ দেখতে সক্ষম হয়েছেন।
নিঝুম দ্বীপে হরিণ কমে যাওয়ার কারণ:
- হরিণ নিয়ে শুরুতেই করা হয় বিরাট ভুল। প্রতিবেশ বিবেচনা না করেই সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বনে ছাড়া হয় হরিণ। যেখানে হরিণ থাকবে, সেখানে বাঘ, বানর, কুমির ও ম্যানগ্রোভ বনের অন্য সব প্রাণী ও উদ্ভিদ থাকতেই হবে। না হয় খাদ্যচক্র, বাস্তুতন্ত্রের মতো প্রাকৃতিক সূত্রে বিপর্যয় নামবে । মানবসৃষ্ট ম্যানগ্ৰোভ বনে অবমুক্ত করা হরিণের বেলায় ও সেটাই ঘটেছে। প্রকৃতির এই চক্রের কথা তখন মাথায় আসেনি সরকারের। ফলে যা ঘটাবার তাই ঘটেছে। হরিণের অস্বাভাবিক গতিতে বংশবৃদ্ধি যেমন হয়েছে, তেমনি আবার অস্বাভাবিক গতিতেই নিরবংশ হয়ে গেছে। এখানে ম্যালথাসের জনসংখ্যা ত্বত্তের প্রতিফলন ঘটেছে ।
- নিঝুম দ্বীপ কে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পাশাপাশি আবার সরকারি সিদ্ধান্তেই সেখানে লোকালয়করণের মতো দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত কাল হয়ে উঠেছে বুনো হরিণের। একেক সময় একেক দল সরকার গঠন করেছে আর নিজেদের ভোট ব্যাংক বাড়াতে দলীয় সমর্থক গোষ্ঠীকে বনের জমি বন্দোবস্ত দিয়ে দ্বীপে ঢুকিয়েছে। এই মানুষেরা দ্বীপের মধ্যে যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হরিণের বাসস্থান ধ্বংস করে এদের বংশ নিপাত করেছে।
- বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যহীনতার ফলে নিঝুম দ্বীপে ধীরে ধীরে কুকুর ও শিয়াল বাড়তে থাকে।এই শিয়াল ও কুকুর গুলো হরিণের বাচ্চা ধরে খেয়ে ফেলতে থাকে। যা হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়- জলোচ্ছ্বাসে মারা পড়ে হাজারো হরিণ। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সুপেয় পানির অভাবে হরিণ মরতে শুরু করে, লোকালয়ে চলে আসলে একটা পর্যায়ে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকেরা হরিণ ধরে খাওয়া শুরু করে।
- দ্বীপে মানুষ বেড়েছে। বনের আয়তন কমেছে।মানুষ আর বন্য প্রাণী তো পাশাপাশি থাকতে পারে না। তাই ধীরে ধীরে হরিণ কমেছে ।
- কৃত্রিম বনে একদিকে হরিণ বাড়তে থাকে, অন্যদিকে বাড়ে গাছের উচ্চতাও। একটা পর্যায়ে গাছের পাতা হরিণের নাগালের বাইরে চলে যায়। আবার বাড়তি হরিণের খাদ্যচাহিদাও বেড়ে যায়। হরিণ খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। খাদ্য সংকটে একটা সময় বাড়ির উঠানে লাগানো সবজিগাছও খেয়ে ফেলা শুরু করে হরিণের দল। রান্না করে রাখা পাতিল ভর্তি ভাত সাবাড় পর্যন্ত করেছে।ধানখেতেও হানা দিত হরিণে,দলবেঁধে খেয়ে ফেলত ক্ষেতের ফসল। খাবারের সন্ধানে বনের ভেতরে-বাইরে, সমুদ্রের ধারে ঘুরে বেড়াতে থাকে হাজার হাজার হরিণ।সেই সুযোগ দ্বীপের মানুষ হরিণ ধরে খাওয়া শুরু করে।
- ঘূর্ণিঝড় গুলোতেও প্রচুর পরিমাণে হরিণ মারা পড়েছে। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই হাজার হাজার হরিণ ভেসে গেছে।
- স্ত্রী হরিণ সংখ্যা উল্লেখ যোগ্য হারে কমে যাওয়া।
- ২০১২ সালে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধিত ও কার্যকর হওয়ার আগে পর্যন্ত মানুষ গোপনে এবং প্রকাশ্যে হরিণ শিকার করে রান্না করে খেত।
- স্থানীয়দের একটি দুষ্টচক্র হরিণ পাচার ও হরিণের মাংস বিক্রি শুরু করে। ছোট বা মাঝারি আকারের একটা হরিণ ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ায় ,লোভে পড়ে তারা হরিণ শিকার ও পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
হরিণের জীবন চক্র:
- ফিমেল চিত্রা হরিণ ১৪ থেকে ১৭ মাস বয়সের মধ্যে মা হওয়ার উপযোগী হয়। হরিণের গর্ভ ধারণ কাল ২১০-২২৫ দিন। হরিণের প্রসব কাল ধরা হয় বসন্তকাল কে, কিছু ব্যতিক্রম ও দেখা যায় কিন্তু সংখ্যায় কম। প্রতি প্রসবকালে একটি, কখনো দুটি হরিণ শাবকেরও জন্ম হয়। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তারা মায়ের দুধ খায়। এই ছয় মাসের মধ্যে যদি শাবক মারা যায়, তবে মা হরিণ পুনরায় প্রজননক্ষম হয়। বুনো হরিণ ৯ থেকে ১১ বছর পর্যন্ত বাঁচে। প্রায় প্রতিবছরই বাচ্চা দেয় মা হরিণ।
✓নিঝুম দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ:
- বুনো হরিণের অভয়ারণ্য
- নদী ও সমুদ্রের তাজা মাছ
- ম্যানগ্ৰোভ বনাঞ্চল
- শীতে খেজুরের তাজা ফ্রেশ রস
- খেজুরের ফ্রেশ মিঠাই
- মহিষের সুস্বাদু টক দই
- প্রাকৃতিক ভাবে পালিত দেশি গরুর দুধ
- হরেক রকমের অতিথি পাখি
- নিরিবিলি পরিবেশ
- সবুজে ঘেরা প্রকৃতি
- ছোট নৌকা নিয়ে বনে ভ্রমণ
- সমুদ্র সৈকতে ক্যাম্পিং
- সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত
- ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
- ভঙ্গুর অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও পর্যটনের জন্য নিরাপদ
- ভার্জিন দ্বীপ , পরিবেশ এর মান ভালো।
- মাটির চুলার রান্না
নিঝুম দ্বীপের অসুবিধা সমূহ:
- চিকিৎসা খাত খুবই দূর্বল, হঠাৎ অসুস্থ হলে অনেকটা ঝামেলায় পড়তে হবে।
- ফার্মেসি ও খুব বেশি নেই।
- বনের গহিনে নেটওয়ার্ক থাকে না ।
- পরিবার ও ছোট বাচ্চা নিয়ে ঘুরার জন্য যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা নেই ।
- কাপল ট্রুর দিতে পারবেন, কিন্তু অন্যান্য পর্যটন স্পট এর মত সুযোগ সুবিধা নেই। কষ্ট সহ্য করতে পারলে যেতে পারেন।
পরামর্শ:
- খুব বেশি আশা নিয়ে যাবেন না, কারণ বুনো হরিণ বর্তমানে দেখতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার।
- আকাশ কুসুম কিছু নেই।
- প্রকৃতি,পাখির শব্দ, বনাঞ্চল,সমুদ্র, নিরিবিলি, পরিবেশ পছন্দ করে এবং মাটির চুলার টাটকা খাবার পছন্দ করে যারা,নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ তাদের জন্য।
- কয়েক জন মিলে একত্রে নৌকা ভাড়া করে বনে ঘুরতে গেলে খরচ কম পড়বে।
- থাকার হোটেলে রুম দামাদামি করে নিবেন।
শতর্কতা :
- জরুরী ঔষধ সাথে নিবেন।
- বনে গাইড নিয়ে ঘুরলে সেইফ ফিল করবেন, তবে একাকি ঘুরাও সেইফ । নৌকার মাঝি কে গাইড হিসাবে রাখতে পারবেন তাইলে বাড়তি টাকা দিতে হবে না।
- ক্যাম্পিং করলে তাবু থেকে বের হয়ে ঘুরা ঘুরির সময় দামি জিনিস পত্র যেমন টাকা ও ইলেকট্রনিক পণ্য সামগ্রী সাথে নিয়ে নিবেন। এমনিতে তাঁবুতে থাকাকালীন সমস্যা হবে না।
- বাইক ভাড়া দামাদামি করে নিবেন।
- হোটেলের খাবার খাওয়ার আগে দাম জেনে নিবেন, বাড়তি বিল করতে পারবে না
✓ভ্রমণের উপযুক্ত সময়:
- নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় নভেম্বরের শুরু থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই সময়ের আবহাওয়া অনুকূল থাকায় নদী শান্ত থাকে। তখন নৌ যাতায়াত অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিমুক্ত। এই সময়ে দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করা সহজ হয়। তবে বছরের অন্যান্য সময়, বিশেষ করে বর্ষাকালে, মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠে, যা দ্বীপে যাত্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলে।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে:
বাস পথে হলে-
- সায়েদাবাদ থেকে হিমাচল,নীলাচল,লাল সবুজ, একুশে এক্সপ্রেস যে কোনো একটি বাসের নোয়াখালীর লাষ্ট স্টপ সোনাপুর এর টিকেট নিয়ে নিবেন। এসি ৫৫০ টাকা ননএসি ৫০০।
- সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট সিএনজি তে ১০০ টাকা।
- চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নলচিরার ঘাট স্পিড বোট ৩০০ টাকা
- নলচিরা থেকে মোক্তারিয়ার ঘাট মোটর সাইকেল ৩০০-৪০০(২জন উঠা যায় সে ক্ষেত্রে ১৫০-২০০ টাকা) রিজার্ভ সিএনজি ৫০০-৬০০ টাকা ।সময় বেশি লাগবে, রাস্তা খারাপ।
- মোক্তারিয়ার ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপের ঘাট নৌকা ভাড়া ৩০ টাকা।
- নিঝুম দ্বীপের ঘাট থেকে নামার বাজার হোটেল পর্যন্ত ,মোটর সাইকেল ভাড়া ১৫০-২০০ ( ২ জন উঠা যায়)
ট্রেনে পথে-
- উপকূল এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন (সোনাপুর) সর্বো শেষ স্টেশনে নামবেন। (বাকি পথ সোনাপুর থেকে উপরে দেওয়া আছে)
লঞ্চ পথে-
- ঢাকা সদর ঘাট → হাতিয়া (তমরদ্দির ঘাট)
লঞ্চ সময়সূচি :
প্রথম ট্রিপ: ফারহান-৪ লঞ্চটি সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায় বিকাল ৫:৩০ মিনিটে।
দ্বিতীয় ট্রিপ: ফারহান-৩ লঞ্চটি একই সময়ে ছেড়ে যায়। সময় লাগবে ১৬ ঘন্টা।
- হাতিয়া → ঢাকা:
প্রতিদিন দুপুর ১২:০০ থেকে ১:০০ টার মধ্যে হাতিয়া থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায় এবং রাত ৩:০০ থেকে ৪:০০ টার মধ্যে ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছায়।
📞 যোগাযোগ:
- ঢাকা সদরঘাট অফিস: +৮৮০-২-৯৫৫৬০১৪
- হাতিয়া অফিস: +৮৮০-৩২-৫৬৭২৩৪
টিকেট:
- Shohoz.com
- LaunchBD.com
লঞ্চ থেকে বেরিয়ে তমরদ্দির -মোক্তারিয়ার ঘাট বাইক ২৫০০-৩৫০ টাকা।
(বাকি পথ পূর্বের মত)
চট্টগ্রাম থেকে –
বাস পথে হলে-
- একে খাঁন মোড় থেকে বাঁধন অথবা রেসেলাহ বাসের টিকেট নিবেন লাষ্ট স্টপ সোনাপুর এর টিকেট নিবেন।২৫০ টাকা নন এসি। বাসের মান তত ভালো না। সময় নিবে ৩-৫ ঘন্টা।
- ✓যদি শাহী অথবা জোনাকির টিকেট নেন বাস ভালো হবে। ভাড়া এসি ৪০০ টাকা ,নন এসি ৩৫০ টাকা। চৌমুহনী চৌরাস্তা নামতে হবে। সময় লাগবে ২-৩ ঘন্টা।
- এরপর সিএনজি তে করে সোনাপুর ৪০ টাকা নিবে। সময় লাগবে ২০ মিনিট।
- সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট সিএনজি তে ১০০ টাকা।
- চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নলচিরার ঘাট স্পিড বোট ৩০০ টাকা।
- নলচিরা থেকে মোক্তারিয়ার ঘাট মোটর সাইকেল ৩০০-৪০০(২জন উঠা যায় সে ক্ষেত্রে ১৫০-২০০ টাকা)
- রিজার্ভ সিএনজি ৫০০-৬০০ টাকা ,সময় বেশি লাগবে। রাস্তা খারাপ।
- মোক্তারিয়ার ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপের ঘাট নৌকা ভাড়া ৩০ টাকা।
- নিঝুম দ্বীপের ঘাট থেকে নামার বাজার হোটেল পর্যন্ত,মোটর সাইকেল ভাড়া ১৫০-২০০ ( ২ জন উঠা যায়)
লঞ্চ পথে:
- চট্টগ্রাম সদর ঘাট থেকে নলচিরার ঘাট
শনিবার, সোমবার, বৃহস্পতিবার: সকাল ৯:০০ টায় চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায় এবং বিকেল ৩:৩০ টায় হাতিয়া পৌঁছায়।
নলচিরা ঘাট→ চট্টগ্রাম সদর ঘাট:
রবিবার, মঙ্গলবার, শনিবার: সকাল ৯:০০ টায় হাতিয়া থেকে ছেড়ে যায় এবং বিকেল ৩:৩০ টায় চট্টগ্রাম পৌঁছায়।
www.biwtc.gov.bd অনলাইন টিকিট।
- চট্টগ্রাম সদরঘাট অফিস: +৮৮০-৩১-৬৩৫০৪১
- হাতিয়া নলচিরা অফিস: +৮৮০-৩২-৫৬৭২৩৪
লঞ্চ ভাড়া:
-
সাধারণ আসন-৪৫০টাকা
-
২য় শ্রেণীর কেবিন – ১০২০টাকা
-
১ম শ্রেণীর কেবিন -১৫৮০টাকা
-
ওনার্স কেবিন -২১৩০টাকা
-
ভিওআইপি কেবিন -৩১৮০ টাকা
(আবহাওয়া বা সরকারি নির্দেশনার কারণে সময়সূচিতে পরিবর্তন হতে পারে)
পুরোটাই সমুদ্র জার্নি বেশ উপভোগ করবেন।
বাকি পথ উপরে দেওয়া আছে।
যে যে স্থান গুলো ঘুরবেন:
- নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান
- খেজুর বাগান বিচ/ সিগনেচার স্পট
- নামার বাজার বিচ
- সূর্যমুখী বিচ
- পালকি বিচ
- চৌধুরী খাল
- কমলার দীঘি
- ওয়াচ টাওয়ার
- নৌকা নিয়ে আশপাশের ছোট খাটো চর গুলোতে ঘুরবেন।
নোট: নিঝুম দ্বীপের বিচে খুব বেশি উচ্চতার ঢেউ পাবেন না।সব জায়গার আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।অন্য জায়গার সাথে তুলনা না করাই ভালো।
ফেনিল সাগরের মাঝে কোনো দ্বীপ ভ্রমণ করা শরীর ও মন দুটোর জন্যই স্বাস্থ্যকর। নিঝুম দ্বীপের সৈকতে এসে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ যে কোনো মনের অস্থিরতাকে শান্ত করতে সক্ষম। তাছাড়া নিঝুম দ্বীপের সুস্থ কোলাহল অতি বার্ধক্যে পীড়িত মানুষের ভেতর থেকেও বের করে আনতে পারে শিশুসুলভ চঞ্চলতা।
নিঝুম দ্বীপে সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের ডাক শিরদাঁড়া দিয়ে রোমাঞ্চের ঢেউ তোলে।
আপনার ভ্রমণ উপভোগ করুন। যাত্রা নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক!