করলা চাষ: পুষ্টি, পরিচর্যা ও ফলনের সম্পূর্ণ গাইড
বাংলাদেশে করলা চাষ: পুষ্টিগুণ, পরিচর্যা ও লাভজনক ফলন কৌশল :
করলা বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর সবজিগুলোর একটি। স্বাদে তিক্ত হলেও এর ভেষজ গুণ এবং রান্নার বহুবিধ ব্যবহার করলাকে প্রতিটি বাঙালির রান্নাঘরে জায়গা করে দিয়েছে। শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, করলা এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে ভালো আয় করা সম্ভব।
করলার পুষ্টিগুণ
প্রতিটি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে:
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালসিয়াম | ২০-৩০ মি.গ্ৰা. |
ভিটামিন সি | ৮৮.২ মি.গ্ৰা. |
আমিষ | ১.৫-২ % |
লৌহ | ১.৮- ২ মিলিগ্ৰাম |
এই উপাদানগুলো করলাকে একটি পুষ্টিকর সবজি হিসেবে তুলে ধরে।
করলা চাষের উপযুক্ত পরিবেশ
করলা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত পরাগায়নে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি করলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, বিশেষত যদি মাটি জৈব সারসমৃদ্ধ হয়।
করলার জনপ্রিয় জাতসমূহ
১. বারি করলা-১
- গাঢ় সবুজ রঙের
- গড় ফলন: প্রতি গাছে ২৫-৩০টি
- গড় ওজন: ১০০ গ্রাম
- লম্বায় ১৭-২০ সেমি, ব্যাস ৪-৫ সেমি
- চারা রোপণের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ
- ফলন: ২৫-৩০ টন/হেক্টর
২. গজ করলা
- সবুজ রঙের বড় আকৃতির ফল
- প্রতি গাছে ফল ১৫-২০টি
- গড় ওজন: ১৫০-২০০ গ্রাম
- লম্বায় ২৫-৩০ সেমি, ব্যাস ৬-৭ সেমি
- ফলন: ২০-২৫ টন/হেক্টর
করলার জীবনকাল ও চাষের সময়
করলার জীবনকাল সাধারণত ৪ থেকে সাড়ে ৪ মাস। তবে জাত এবং আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এই সময় কমবেশি হতে পারে।
বীজ বপনের উপযুক্ত সময়:
ফেব্রুয়ারি থেকে মে। জানুয়ারিতে কেউ কেউ আগাম চাষ করলেও ঠাণ্ডার কারণে গাছের বৃদ্ধি ধীর হতে পারে।
বীজের হার
করলা: ৬-৭.৫ কেজি/হেক্টর
জমি প্রস্তুতি ও রোপণ পদ্ধতি
মাটির মাদা তৈরি করতে হয় ৪০x৪০x৪০ সেমি মাপে। প্রতি মাদায় ২টি বীজ বপন করা যায় বা ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।
উচ্ছে চাষে সারির দূরত্ব ১ মিটার এবং করলার ক্ষেত্রে ১.৫ মিটার রাখতে হয়।
সারের ব্যবহার (শতাংশ ভিত্তিক)
সার মোট (গ্রাম) জমি তৈরিতে ৭-১০ দিন আগে ১০-১৫ দিন পর ৩০-৩৫ দিন পর ৫০-৫৫ দিন পর ৭০-৭৫ দিন পর
সার | মোট (শতাংশ প্রতি) | জমি তৈরির সময় | ৭-১০ দিন পূর্বে | ১০-১৫ দিন পর | ৩০-৩৫ দিন পর | ৫০-৫৫ দিন পর | ৭০-৭৫ দিন পর |
---|---|---|---|---|---|---|---|
পচা গোবর | ৮০ কেজি | ২০ কেজি | ৫ কেজি | – | – | – | – |
টিএসপি | ৭০০ গ্রাম | ৩৫০ গ্রাম | ৩০ গ্রাম | – | – | – | – |
ইউরিয়া | ৭০০ গ্রাম | – | – | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম |
এমপি | ৬০০ গ্রাম | ২০০ গ্রাম | ২০ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | – | – | – |
জিপসাম | ৪০০ গ্রাম | ৪০০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
দস্তা সার | ৫০ গ্রাম | ৫০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
বোরাক্স | ৪০ গ্রাম | ৪০ গ্রাম | – | – | – | – | – |
ম্যাগনেশিয়াম | ৫০ গ্রাম | – | ৫ গ্রাম | – | – | – | – |
ফল সংগ্রহ ও ফলন:
চারা গজানোর ৪৫-৬০ দিন পর ফল ধরতে শুরু করে। স্ত্রী ফুল পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। একবার ফলন শুরু হলে তা প্রায় দুই মাস অব্যাহত থাকে।
করলা: ২০-২৫ টন/হেক্টর
বীজ উৎপাদন:
যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি বীজ পাওয়া যায়, যা শতকে ১.২-১.৬ কেজি।
উপসংহার:
করলা শুধু একটি উপকারী সবজিই নয়, এটি একটি লাভজনক ফসলও। সঠিক সময়, সঠিক জাত নির্বাচন এবং সুষম সারের ব্যবহার করলে করলা চাষে সফলতা পাওয়া খুবই সহজ। বাংলাদেশে করলার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, তাই কৃষকদের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে বিবেচিত।