Agro

আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ: কম খরচে বেশি ফলনের কৌশল

লাভজনক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ

বর্তমানে দেশে পেঁপে চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বল্প সময়ে ফল দেয় এবং তুলনামূলকভাবে সহজ এই ফলের চাষ করে অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তবে অধিকাংশ চাষিই এখনও পুরনো পদ্ধতিতে চাষ করে ফলনের দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে।

আধুনিক পদ্ধতির সুফল কী?

উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি গাছ থেকে দ্বিগুণ ফল পাওয়া সম্ভব। মাটি, বীজ, সার, পানি—সব কিছুতেই পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করলেই ফলন বাড়ে বহুগুণে।

পেঁপে স্বল্প জায়গায় চাষ করা সম্ভব?

পেঁপে এমন একটি ফল, যেটি বাড়ির সামান্য ফাঁকা জায়গাতেও ভালোভাবে চাষ করা যায়। দুই-তিনটি গাছ থেকেই একটি পরিবার সারা বছর ফল পেতে পারে।

বপনের সময় :

সাধারণত মার্চ থেকে মে এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর এই দুই সময়কাল বপনের জন্য উপযোগী। ৬ ফুট দূরত্বে গাছ লাগানো ভালো।

চারা তৈরি :

বীজতলা:

  • মাটিতে ১০-১৫ সেমি দূরত্বে সারি করে,
  • প্রতি সারিতে ৩-৪ সেমি গভীরে বীজ বপন করতে হয়।
  • নিয়মিত পানি ও রোদ নিশ্চিত করতে হবে।

পলিথিন ব্যাগ:

  • এতে চারার বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং রোপণের পর গাছ সহজে পরিবেশে মানিয়ে নেয়।
  • বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা গজায়।
  • ৪০-৫০ দিন বয়সী চারা জমিতে রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়।
  • ভালো ফলনের ভিত্তি—ভালো চারা।
  • আর ভালো চারা তৈরি হয় মানসম্পন্ন বীজ থেকে।
  • স্মাট চাষের সূচনাই হয় সঠিক চারায়।

 

বীজ জার্মিনেশন:

  • বীজ প্যাকেট খুলে ১৫–২০ মিনিট রোদে শুকান।
  • এরপর ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন—
  • প্রতি ১২ ঘণ্টায় পানি বদলাতে হবে।
  • পরে পানি ঝরিয়ে ২ মিনিট ম্যানসার বা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডে ভিজিয়ে আবার শুকিয়ে নিন যেন ভেজাভাব না থাকে।
  • একটি কাচের গ্লাসে বীজ রেখে তার ওপর পাতলা কাগজ বা পাতা ও শুকনো গুড়ো মাটি দিন। এতে বাতাস ঢুকবে না, আবার বীজ অঙ্কুরিত হলে চোখে পড়বে।
  • যে বীজগুলো অঙ্কুরিত হবে, সেগুলো পলি ব্যাগ বা ছোট টবে বপন করুন। আর বাকি বীজগুলো রেখে দিন—তারা পরে অঙ্কুরিত হতে পারে।
  • বীজ যত যত্নে রাখবেন, চারা তত বেশি শক্তিশালী হবে!

জমি নির্বাচন

  • পেঁপে চাষের জন্য উঁচু ও পানি নিস্কাশনযোগ্য বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
  • জলাবদ্ধতা পেঁপে গাছের সবচেয়ে বড় শত্রু।
  • তাই বৃষ্টির সময় যেন জমিতে পানি না জমে, সেই দিকটি বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে।
  • রোদ্রউজ্জ্বল জমি , ছায়াতলে পেঁপে ভালো হ

জলবায়ু

উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু পেঁপের জন্য উপযুক্ত। সঠিক পরিচর্যা থাকলে সারাবছরই ফল পাওয়া যায়।

 

জমি তৈরি

  • পেঁপে চাষের জন্য নিধারিত জমি বারবার চাষ ও মই দিয়ে  ভাল ভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • এরপর দুটি বেডের মাঝে ১ ফুট চওড়া এবং ২০ সে.মি. গভীর নালা করতে হবে। নালা সহ প্রতিটি বেড ৬ ফুট চওড়া এবং জমি অনুপাতে লম্বা হবে।

 

গর্ত তৈরি :

চারা রোপণের ১৫ দিন আগে বেডের মাঝখানে প্রতি ৬ ফুট  দূরত্বে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে মাটিতে সার মিশাতে হবে।

সার প্রয়োগ:

প্রতি গর্তে,

সারের নাম পরিমাণ
      পঁচা  গোবর             ১৫ কেজি
       ইউরিয়া             ৫০০ গ্ৰাম
       টিএসপি             ৫০০ গ্ৰাম
       এমওপি             ২৫০ গ্ৰাম
       জিপসাম             ২০ গ্ৰাম
       বরিক এসিড             ২০ গ্ৰাম
       জিংক সালফেট             ২০ গ্ৰাম
  • ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে।  এরপর সার মিশ্রিত গর্তে সেচ দিতে হবে।
  • চারা লাগানোর পর গাচে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে ১০০ গ্রাম করতে হবে।
  • মাটিতে যথেষ্ট রস না থাকলে সার দেওয়ার পর সেচ দিতে হবে।

সতর্কতা:

  • পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে পলিব্যাগটি খুব সাবধানে অপসারণ করতে হবে, যাতে মাটির বলটি ভেঙে না যায়।
  • রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে চারার গোড়া বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে গভীরে না যায়।
  • পড়ন্ত বিকেলে চারা রোপণের জন্য উত্তম সময়।

পরিচর্যা:

  • পেঁপে চাষে সাফল্য আসে নিয়মিত যত্নে,
  • ফলন বাড়ানোর মূল চাবিকাঠি।

আগাছামুক্ত জমি:

সবসময় গাছের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে, গোড়ার মাটি আলগা করে দিলে শিকড় নিশ্বাস নিতে পারে। তবে বর্ষায় সাবধান—মাটি যেন বেশি আলগা না হয়।

সঠিক সেচ:

শুষ্ক মৌসুমে গাছকে ঠিকমতো পানি দিন, তবে পানি যেন জমে না থাকে—নিকাশের ব্যবস্থা জরুরি।

খুঁটি স্থাপন :

গাছ নড়বড়ে হলে বাঁশ বা কাঠি দিয়ে বেঁধে দিন।

চিত্র: খুটি না দেওয়ায় গাছ হেলে পড়েছে

ফল নির্বাচন:

প্রতিটি পাতার গোড়ায় একাধিক ফল আসলে, সব চাইতে ভালটি রেখে বাকিগুলো ছেঁটে দিন।

ছাঁটাই:

দ্বিতীয় বছরে ফল বেশি হলেও গাদাগাদি হয়ে যায়, তাই ছোট ও বিকৃত ফলগুলো বাদ দিন।

ফল সংগ্রহ:

  • চারা রোপণের ৬-৮ মাসের মধ্যে গাছে ফল আসতে শুরু করে। ফল হালকা হলুদ রঙ ধরলে সংগ্রহ করতে হয়।
  • সবজি হিসেবে কচি ফল সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়। বৈশাখ থেকে শ্রাবন মাস পর্যন্ত বাজারে পেঁপের দাম ভালো পাওয়া যায়।

Meherab Hossain

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Agro

জৈব সার তৈরির সহজ উপায় ও সুবিধা সমূহ

শুরুতে জেনে নিই জৈব সার মূলত কি? এক প্রকার কার্বন (C) সমৃদ্ধ সার যা প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হয়। সার হল
Agro

বাংলাদেশের কৃষি ও দরিদ্রদের দুষ্ট চক্র

♥ পরিচিতি: বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ।শ্রমশক্তি জরুরি ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী,এই দেশের শতকরা ৪৫ শতাংশ মানুষ কৃষি জাত পেশার সাথে