বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি; ট্রেন্ড না ট্রাডিশন?

বৃষ্টি হলেই আমাদের যেন পেয়ে বসে এক আরামদায়ক আলস্য। অন্ধকার মেঘলা দিনের আবেদন কী ফেরানো যায়?
ঝমঝম বৃষ্টিতে ঘুম থেকে উঠতে অবধারিতভাবেই দেরি হয়।
সেটা ছড়িয়ে পড়ে সারাদিনের অন্যান্য কাজে। সবকিছুই কেমন ঢিমেতালে চলতে থাকে।
বৃষ্টিতে আরেকটা জিনিস যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেটা হলো গরম গরম খিচুড়ি।
দুফোঁটা বৃষ্টি হতে বাকি আর আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে খিচুড়ির ছবি পোস্ট করতে দেরি নেই।
খিচুড়ির সাথে ডিম, বেগুন ভাজা থেকে ইলিশ, মুরগী, গরু সবই থাকতে পারে।
কখনো কী মনে হয়েছে, এই ট্রেন্ড শুরু হলো কী করে?
খিচুড়ি এই উপমহাদেশে এসেছিলো মোঘলদের রসুইঘর থেকে। রাজপরিবার থেকে শুরু করে সৈনিকদের খাদ্যতালিকায় স্থান ছিলো খিচুড়ির।
এছাড়াও আমাদের পূর্বপুরুষরাও যখন বৃষ্টিতে ঘর থেকে বেরোতে পারতো না তখন একপাতিলেই চালে ডালে মিশিয়ে সহজে তৈরী করে ফেলতো খিচুড়ি। বর্ষার দিনে শুকনো লাড়কি পাওয়াও বেশ কঠিন তাই গৃহিনী চাইতেন যতদ্রুত সম্ভব রান্না শেষ করতে। বেশ ভারী খাবার হওয়ায় এতে শর্করা আর প্রোটিনের চাহিদা দুইই মিটতো।
এতে স্যাঁতসেঁতে দিনে বেশ গরমগরম খাবার পাওয়া যেত খুবই সহজে।
বর্তমানে একজনের দেখাদেখি অন্যজনকে পোস্ট দিতেই হবে এই মর্মেও অনেকখানি খিচুড়ির রিব্র্যান্ডিং হয়েছে।
বাসায় পরিবারের সাথে বসে খাবার পাশাপাশি, এখন রেস্টুরেন্টেও স্পেশাল খিচুড়ির মেন্যু আছে।
মন চাইলে বাইরে ঘুরে ফিরে প্রিয়জনের সাথে পছন্দের খাবার উপভোগ করা যায়।
বৃষ্টিতে আমাদের মন এমনিতেই কিছুটা আর্দ্র থাকে। সেখানে গরমগরম খিচুড়ি একটা নরম উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়। মায়ের হাতের অমৃত কিংবা নিজের কাঁচা হাতের রান্না, সবকিছুই খিচুড়ির আবেদনকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
বৃষ্টি মানেই কী খিচুড়ি? না, কিন্ত এমন কর্মব্যস্ত জীবনে ছোট একটা আবেগের নাম খিচুড়ি। বৃষ্টিবিলাসের একটা উপকরণ খিচুড়ি।
একটা খাবারে যদি সকলের মন ভালো হয় তাতে ক্ষতি কী? ট্রেন্ড থেকেই শুরু আমাদের নতুন ট্রাডিশন।