Uncategorized

ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী।

সংক্ষিপ্ত পরিচয়

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো শুধু শিক্ষাদানের জন্য নয়, নৈতিকতা, মানবতা এবং নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রেখে চলেছে। ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয় তেমনই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা ছাত্রদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে বহু বছর ধরে।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো ব্রাদার্স আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস, অবস্থান, অবকাঠামো, একাডেমিক পরিবেশ, সহ-শিক্ষা কার্যক্রম এবং এর সামগ্রিক অবদান নিয়ে।

বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা

ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয় (Brother Andre High School) নোয়াখালীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে ১৯৩৯ সালে। এটি ক্যাথলিক চার্চের “ক্রিশ্চিয়ান ব্রাদার” নামক ধর্মভিত্তিক শিক্ষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মযাজক “সেন্ট ব্রাদার আন্দ্রেঁ“-এর নামে, যিনি বিশ্বব্যাপী মানবতার জন্য কাজ করেছেন এবং শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিতা মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানবিক গুণাবলি ও নৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটানো।

বিদ্যালয়টি শুরুতে একটি ছোট ক্যাম্পাস ও সীমিত সংখ্যক ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, বর্তমানে এটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে (বর্তমানে বিদ্যালয়ের ২৮০০+ ছাএ/ছাএী রয়েছে)। এটি নোয়াখালী অঞ্চলের অন্যতম সেরা স্কুল হিসেবে পরিচিত।

বিদ্যালয়ের পরিবেশ – শিক্ষার জন্য এক শান্তিপূর্ণ ঠিকানা

নোয়াখালীর ব্যস্ত শহরের মধ্যে যদি এমন কোনো জায়গা খুঁজে পান যেখানে প্রবেশ করলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়, তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয়। গেটের ভিতরে পা রাখলেই মনে হবে—এই স্কুলটা শুধু পড়ালেখার জায়গা নয়, বরং এটি এক টুকরো আশ্রয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বপ্নগুলো নিয়ে প্রতিদিন এগিয়ে চলে।

বিদ্যালয়টির চারপাশটা সবুজে ঘেরা, গাছের ছায়ায় বসে একটু প্রশান্তি পাওয়া যায়। সকালে যখন ছাত্ররা সারি বেঁধে স্কুলে ঢোকে, পাখির কিচিরমিচির ডাকে যেন সকালটা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। খোলা মাঠে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলার সময় ছাত্রদের আনন্দ আর হাসির শব্দে পুরো ক্যাম্পাসটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

সবচেয়ে চমৎকার দিক হলো এখানকার শৃঙ্খলা আর বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। শিক্ষকরা খুব আন্তরিক আর সহপাঠীদের মধ্যে বন্ধুত্বটা এমন যে, নতুন কেউ এলেও যেন আপন হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি।

বিদ্যালয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ভালো। গেটের বাইরে নিরপেক্ষ নিরাপত্তা প্রহরী, ভেতরে সিসিটিভি ক্যামেরা—সবকিছুই আছে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন টয়লেট—ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।

এই স্কুলে পড়া মানে শুধু ভালো রেজাল্ট করা নয়, বরং একজন ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা পাওয়া। এখানকার পরিবেশটাই এমন যে মন চাইবে—এই স্কুল জীবনের দিনগুলো যেন আর শেষ না হয়।

বিদ্যালয়ের অবস্থা

ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের নোয়াখালী সদর উপজেলার সোনাপুর এলাকায় অবস্থিত একটি খ্রিস্টান মিশনারি বিদ্যালয়। (বিদ্যালয়টির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা: পশ্চিম বাদরিপুর, সোনাপুর-৩৮০২, নোয়াখালী।) যা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণটি সবুজে ঘেরা এবং তিনটি খেলার মাঠসহ একটি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক।

আপনি যদি বিদ্যালয়টি ভিজিট করতে চান, তাহলে সোনাপুর বাজার থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় সহজেই পশ্চিম বাদরিপুর এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন। বিদ্যালয়টি স্থানীয়ভাবে সুপরিচিত, তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নিলে আপনি সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও একাডেমিক অর্জন

শিক্ষার আলো ছড়ানোর ক্ষেত্রে ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী, একটি আদর্শ নাম। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি দক্ষতা, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতাভিত্তিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলেছে ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হিসেবে।

শিক্ষা কার্যক্রমের বৈচিত্র্য

বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনার বিকাশ ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি রয়েছে—

  • মাল্টিমিডিয়া ক্লাস।
  • সৃজনশীল প্রশ্নব্যবস্থার প্রশিক্ষণ।
  • বিশেষ প্রস্তুতি ক্লাস।(বোর্ড পরীক্ষার্থীদের জন্য)
  • বার্ষিক মূল্যায়ন ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে ছাত্রদের ফলাফল মূল্যায়ন।

যোগ্য ও উৎসাহী শিক্ষকবৃন্দ

বিদ্যালয়ের অন্যতম শক্তি এর অভিজ্ঞ ও আন্তরিক শিক্ষকবৃন্দ। প্রতিটি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা পাঠদান করেন। তাঁরা শুধু পঠিত বিষয়ই নয়, শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, আচরণ ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কেও শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

একাডেমিক অর্জন

বছরের পর বছর ধরে ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে আসছে। প্রতি বছর গড়পড়তা জিপিএ-৫ অর্জনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা শুধু বোর্ড পরীক্ষায় নয়, বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করে এবং পুরস্কার অর্জন করে থাকে।

প্রধান কিছু অর্জন হলো:

  • বোর্ড পরীক্ষায় ৯৫%+ পাশের হার।
  • প্রতিবছর ২০+ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে।
  • বিতর্ক, কুইজ, রচনা প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা, স্কাউট ক্যাম্পিংয়ে জাতীয় পর্যায়ে পদক অর্জন।

সহশিক্ষা কার্যক্রমের সমন্বয়

বিদ্যালয় বিশ্বাস করে যে, একটি শিশু শুধু পাঠ্যবই পড়েই পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারে না। তাই সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন—

  • ডিবেট ক্লাব: জাতীয় ও আন্তঃবিদ্যালয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে নিয়মিত পুরস্কার অর্জন।
  • বিজ্ঞান ক্লাব ও আইটি ক্লাব: প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ছাত্রদের উৎসাহ প্রদান।
  • স্কাউট ও রোভার: নেতৃত্ব ও শৃঙ্খলার উন্নয়নে সহায়ক।
  • খেলাধুলা: ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং অর্জন।
  • সাংস্কৃতিক দল: নাচ, গান, নাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রদের সম্পৃক্ততা।

এইসব আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বগুণের বিকাশ ঘটানো হয়।

প্রযুক্তি ও আধুনিক অবকাঠামো

বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষা চিন্তাই করা যায় না। ব্রাদার আন্দ্রে উচ্চ বিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এখানে রয়েছে:

  • স্মার্ট ক্লাসরুম: মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদান।
  • কম্পিউটার ল্যাব: ইন্টারনেট-সক্ষম কম্পিউটারে কম্পিউটার শিক্ষা।
  • সিসিটিভি মনিটরিং: বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে নজরদারি।
  • উন্নত বিজ্ঞানাগার: পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আধুনিক যন্ত্রপাতি।

এছাড়াও বিদ্যালয়ের বিকালের স্কুল অর্থাৎ নিম্নবিত্ত/হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা অবস্থা রয়েছে।

পরিশেষে

ব্রাদার আন্দ্রেঁ উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি মূল্যবোধের পাঠশালা। এখানকার শিক্ষার্থীরা যেমন বইয়ের জ্ঞান অর্জন করে, তেমনি শেখে শৃঙ্খলা, নৈতিকতা, সহানুভূতি ও নেতৃত্বের গুণাবলি। অভিজ্ঞ ও আন্তরিক শিক্ষকমণ্ডলী, মনোরম পরিবেশ, আধুনিক শিক্ষাসংস্থান এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমের সমন্বয়ে বিদ্যালয়টি আজ নোয়াখালীর গর্বে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবছর বিদ্যালয়ের একাডেমিক ফলাফল এবং সহ-শিক্ষা অর্জন প্রমাণ করে যে, এটি কেবল ভালো শিক্ষার্থীই নয়, বরং সমাজে অবদান রাখতে পারা, সুনাগরিক গড়ে তোলার একটি নির্ভরযোগ্য কারখানা।

Sheikh Farid Uddin

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Uncategorized

আস-সালাম জামে মসজিদ, লক্ষ্মীপুরে নান্দনিক স্থাপত্য ও ইসলামী ঐতিহ্যের মিলনস্থল।

সংক্ষিপ্ত পরিচয় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা এলাকায় অবস্থিত আস-সালাম জামে মসজিদ একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য
Uncategorized

ঈদের ছুটির আগে বৃষ্টি,প্রেম, ক্যাম্পাস, আর কদম ফুলে ভেজা এক গল্প

🌧️ বৃষ্টি বিলাস ঈদের ছুটি এসে গেছে দরজায় কড়া নাড়ছে। ক্যাম্পাস ধীরে ধীরে খালি হয়ে যাচ্ছে, যেন শহর থেকে প্রাণ