Travel

চেয়ারম্যান-ঘাট নোয়াখালী উপকূলীয় সৌন্দর্যের এক অপূর্ব মিলনস্থল।

সংক্ষিপ্ত পরিচয়

নোয়াখালীর বুকে অবস্থিত একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হলো চেয়ারম্যান ঘাট। এটি নোয়াখালী সদর উপজেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা কেবল স্থানীয় জনগণের জন্যই নয়, বরং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের জন্যও এক বিশেষ আকর্ষণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীঘেরা পরিবেশ এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার কারণে চেয়ারম্যান ঘাট এখন একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চেয়ারম্যান ঘাট কোথায় অবস্থিত?

চেয়ারম্যান ঘাট অবস্থিত নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের একটি অংশে। এটি নদী সংলগ্ন একটি ঘাট, যা মূলত মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে নৌযান চলাচলের সুবিধা থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সপোর্ট হাব হিসেবে পরিচিত।

চেয়ারম্যান ঘাটের ইতিহাস ও নামকরণ

চেয়ারম্যান ঘাটের নামকরণ হয়েছে একজন প্রভাবশালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নামে, যিনি এই ঘাটের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার উদ্যোগেই এলাকাবাসীর জন্য এই ঘাট তৈরি হয়, এবং তা পরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘চেয়ারম্যান ঘাট’ নামে।

পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

চেয়ারম্যান ঘাটে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ নদী, নৌকা চলাচল, আর নদীর পাড়ে সবুজে ঘেরা পরিবেশ। ভোর বেলা এবং সন্ধ্যাবেলায় এই ঘাটের সৌন্দর্য এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়। মেঘনার জলরাশি ও নদীর পাড়ের হাওয়া যে কাউকে বিমোহিত করে।

স্থানীয় জীবিকা ও মাছ ধরা

এই ঘাট স্থানীয় জনগণের জীবিকার অন্যতম উৎস। প্রতিদিন শত শত জেলে এখান থেকে নদীতে মাছ ধরতে যান। তাজা মাছ এখানকার এক প্রধান সম্পদ। স্থানীয় বাজারেও এই ঘাট থেকে ধরা মাছ সরবরাহ করা হয়।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ

  • নৌকা ভ্রমণ: পর্যটকরা এখানে এসে নদীতে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ পান। এটি বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে খুবই জনপ্রিয়।
  • ছবির জন্য উপযুক্ত স্থান: প্রকৃতিপ্রেমী ও ফটোগ্রাফারদের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট এক আদর্শ স্থান। নদী, নৌকা, সূর্যাস্ত – সবই একে অপরকে নিখুঁতভাবে পরিপূরক করে।
  • লোকজ সংস্কৃতি: এখানে গেলে স্থানীয় লোকসংস্কৃতি এবং মানুষের সহজ-সরল জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ মেলে।

চেয়ারম্যান ঘাটে যাতায়াত ব্যবস্থা

চেয়ারম্যান ঘাটে পৌঁছানো এখন বেশ সহজ। নোয়াখালী শহর থেকে অটোরিকশা, সিএনজি বা স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়। সড়ক উন্নয়নের ফলে বর্তমানে যাত্রা সময়ও অনেক কম।

খাদ্য ও স্থানীয় খাবারের স্বাদ

চেয়ারম্যান ঘাটে গেলে অবশ্যই স্থানীয় খাবারগুলো চেখে দেখা উচিত। এখানে তাজা ইলিশ, চিংড়ি এবং নদীর অন্যান্য মাছের স্বাদ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। ছোট ছোট দোকানে ভাজা মাছ, চিংড়ি ভুনা, এবং দেশীয় ভর্তা-মাছের থালি খুব জনপ্রিয়।

নিরাপত্তা ও পর্যটকদের জন্য পরামর্শ

চেয়ারম্যান ঘাট এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর। তবে নদীর পাড়ে অবস্থান করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। এছাড়া নৌকা ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করাই ভালো।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা

চেয়ারম্যান ঘাটকে ঘিরে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন শিল্পের প্রসারে এখানে আরও বিনিয়োগ করলে, এটি নোয়াখালীর অন্যতম বড় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

Sheikh Farid Uddin

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Travel

নিঝুম দ্বীপ যাতায়াত: কিভাবে নিঝুম দ্বীপ যাবেন (ভ্রমণ গাইড)

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিঝুম দ্বীপ যাতায়াত কিভাবে করবেন, তা জানতে চান? নিঝুম দ্বীপ (যাকে নীল দ্বীপও বলা হয়) বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি
Travel

ঢাকা থেকে মুছাপুর ক্লোজার (নোয়াখালী) যাওয়ার সহজ উপায় ও ভ্রমণ গাইড

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মুছাপুর ক্লোজার একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থান, যা স্থানীয়ভাবে “মিনি কক্সবাজার” নামে