তাপপ্রবাহ কী? কেন ও কখন ঘটে – জানুন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশদ বিশ্লেষণ
তাপ-প্রবাহ: প্রকৃতির এক অদৃশ্য থেমে যাওয়া
“রোদ দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তার মেঘ হাঁসে” – এ কথাটা যেমন সত্যি, ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে রোদের হাসিটাই পরিণত হয় গায়ে-পোড়া তাপ প্রবাহে। তখন মেঘ আর আড়ালে থাকে না, হারিয়ে যায় আকাশের অনেক উঁচুতে।
তাপপ্রবাহ — শুনলেই যেন গরমের মধ্যে আরও গরম। কিন্তু এটি শুধু গরমই নয়, বরং এটি একটি বৈজ্ঞানিক ও প্রকৃতিগত ঘটনা। যখন প্রকৃতি তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে, তখনই শুরু হয় এই ‘তাপ-জট’।
তাপপ্রবাহ বলতে আমরা কী বুঝি?
আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, কোনও অঞ্চলে যখন দীর্ঘ সময় ধরে উপরের বায়ুমণ্ডলে নিম্নচাপ এবং নিচে উচ্চচাপের অবস্থান বজায় থাকে, তখন গরম বায়ু আটকে যায় এবং সৃষ্টি হয় তাপপ্রবাহ। একে বলা হয় ‘অ্যন্টিসাইক্লোনিক ব্লকিং’। যা এক প্রকার আবহাওয়ার যানজট।
তাপপ্রবাহ কখন ঘোষণা করা হয়?
আমাদের উপমহাদেশে সাধারণত ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানদণ্ডকে অনুসরণ করা হয়। সমতল ভূমিতে অবস্থিত কোনও অঞ্চলের অন্তত দুটি আবহাওয়া স্টেশনে টানা দুই দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা থাকলে সেটিকে তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এছাড়াও, বছরের সেই সময়ের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থেকে যদি:
- ৪.৫°C – ৬.৪°C বেশি হয়: Heat Wave
- ৬.৪°C-এর বেশি হয়: Severe Heat Wave
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাপপ্রবাহ:
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বিষয়টিকে একটু ভিন্নভাবে দেখে। তারা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে একটি মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে এবং চারটি ধাপে তাপপ্রবাহকে শ্রেণিবদ্ধ করে:
- মৃদু তাপপ্রবাহ: ৩৬° – ৩৮°C
- মধ্যম তাপপ্রবাহ: ৩৮° – ৪০°C
- তীব্র তাপপ্রবাহ: ৪০° – ৪২°C
- খুবই তীব্র তাপপ্রবাহ: ৪২°C এর বেশি
তবে এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ – শুধুমাত্র ২-৩টি জেলায় এই তাপমাত্রা পার হলেই তাপপ্রবাহ ঘোষণা করা যায় না। এটি হতে হবে একটি বড় অঞ্চলের উপর সমানভাবে প্রভাব বিস্তারকারী ঘটনা।
তাপপ্রবাহকে বুঝি সহজ উপায়ে — যানজটের গল্পের মাধ্যমে :
♦ মনে করুন ঈদে আপনি বাসে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই পথে সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। এখন যদি ৭-৮ ঘণ্টা লাগে, এতে একটু বিরক্ত হবেন, কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হবে না। কিন্তু যদি সেটা ১২-১৮ ঘণ্টায় পৌঁছায়? তখন আমরা সবাই বলব “এটা তো মহা-যানজট!
♦ তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রেও এমনই। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যদি প্রকৃতি একেবারে আটকে পড়ে, গরম যেন নড়াচড়া করতে না পারে, তখনই সেটাই প্রকৃত ‘তাপপ্রবাহ’ — প্রকৃতির এক থেমে যাওয়ার মুহূর্ত।
শেষ কথা: সতর্ক থাকুন সচেতন হোন
তাপপ্রবাহ মানেই শুধু গরম নয়, এটি প্রকৃতির ভারসাম্য হারানোর একটি সংকেত। তাই এ সময় সতর্ক থাকা জরুরি। হাইড্রেটেড থাকা, অপ্রয়োজনে রোদের মধ্যে না যাওয়া, শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিন। বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
তাপমাত্রা বাড়ে, জীবন যেন না পোড়ে।