চাল কুমড়া চাষ পদ্ধতি: ঘুরে দাঁড়ানো কৃষির সম্ভাবনা

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটির গুণগত মানের কারণে চাল কুমড়া এখন একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় সবজি ফসল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। উন্নত জাতের সংযোজন, সহজ চাষাবাদ এবং বাজারে চাহিদা থাকার কারণে অনেক কৃষকই এই ফসলে আশার আলো দেখছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক চাল কুমড়া চাষের একটি পরিপূর্ণ পদ্ধতি।
উপযোগী জাতের নির্বাচন:
সারা বছর চাষযোগ্য একটি উন্নত জাত হলো বারি চাল কুমড়া-১। এছাড়াও বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় বিভিন্ন হাইব্রিড জাত, যেমন:
- জালিরাজ,
- মায়া,
- জুপিটার,
- ভেনাস,
- ইউনিক,
- পানডা
- মনি
- বাসন্তী
- নিরালা
- দেব-১২০৩
- মাধবী
- সুমাইয়া
উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত বেছে নেওয়া চাষে সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মাটি ও আবহাওয়া:
চাল কুমড়া চাষের জন্য দো-আঁশ বা এটেল দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। তবে প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এ ফসল চাষ করা যায়, যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে। পানি জমে থাকলে গাছ পঁচে যেতে পারে।
বপনের সময় ও বীজের পরিমাণ:
উপযুক্ত সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস
বীজের পরিমাণ: প্রতি শতাংশে ১৫-২০ গ্রাম
জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি:
বসতবাড়িতে চাষ:
কোণায় মাদা তৈরি করে ৩-৪টি বীজ বপন করুন। চারা বড় হলে বাঁশ বা কাঠি দিয়ে চারা তুলে দিন।
জমিতে চাষ:
- ৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি ঝুরঝুরে করে নিন।
- ২ থেকে ২.৫ মিটার দূরে দূরে ২.৫ ফুট চওড়া ও ২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করে তাতে ৪-৫টি বীজ বপন করুন।
সারের নাম | প্রয়োগের পরিমাণ |
---|---|
ইউরিয়া | ১০০-১২০ কেজি |
টিএসপি | ৮০-১০০ কেজি |
এমওপি (পটাশ) | ৫০-৬০ কেজি |
জিপসাম | ৩০-৪০ কেজি |
জিংক অক্সাইড | ৫-৮ কেজি |
গোবর সার | ৪-৫ টন |
বীজ বপনের ৫-৭ দিন আগে ইউরিয়া ছাড়া বাকি সব সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
পরিচর্যার নিয়ম:
- প্রতি মাদায় ২-৩টি সুস্থ চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলুন।
- নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার ও গোড়ার মাটি আলগা করুন।
- মাটিতে রস না থাকলে সেচ দিন।
- বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করুন।
- গাছ বড় হলে মাচা তৈরি করে দিন।
পোকামাকড় ও রোগ দমন:
মাছি পোকা চাল কুমড়ার প্রধান শত্রু। এটি ফুলে ডিম পেড়ে পরবর্তীতে ফল নষ্ট করে দেয়। ক্ষতির হার ৫০-৬০% পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়:
- আক্রান্ত পোকা দেখা মাত্র ধ্বংস করা
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জমি রাখা
- ফাঁদ তৈরি করা (যেমন: বিষটোপ)
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফল সংগ্রহ:
- বপনের ৬০-৭০ দিন পর থেকেই সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়।
- ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজন এবং সবুজ হুলযুক্ত ফল তুলুন।
- মোরব্বা বা বড়ি তৈরির জন্য পরিপক্ক ফল ১২০-১৩০ দিনে সংগ্রহ করুন।
উপসংহার:
যথাযথ পদ্ধতিতে চাষ করলে চাল কুমড়া হতে পারে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও স্বনির্ভরতার অন্যতম মাধ্যম। চালকুমড়া চাহিদা বাড়ছে গ্রাম ও শহর উভয় এলাকাতেই।
আপনার এলাকায় চাষযোগ্য ভালো জাত ও বীজ সংগ্রহের জন্য অভিজ্ঞ কৃষি অফিস বা মান্যতা প্রাপ্ত বীজ বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করুন।
“তাছাড়া সহায়তা জন্য আমাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।”
কৃষির হাত ধরেই গড়ে উঠুক আমাদের স্বপ্নের গ্রাম।